এক নম্বর পাঁচ মিস্ত্রি লেন – শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায়

›› উপন্যাসের অংশ বিশেষ  

…….সুনন্দা মাথা গলিয়ে খুলে ফেলল পরনের টিশার্ট। পুরনাে শ্বেতপাথরের মতাে হলদেটে আভা ওর চামড়ায়। গলায় শঙ্খের মতাে গভীর তিনটে বৃত্তাকার দাগ। তার নীচে ওর প্রশস্ত বুক। কিন্তু মেয়েদের বুক যেমন হয়, সেরকম নয়। বেঢপ মুটিয়ে যাওয়ার পর ওর স্তনজোড়া বাকি শরীরের থেকে ছােট হয়ে গেছে। এখন আর স্তনসন্ধি বলে আলাদা করে কিছু বােঝা যায় না। শরীর থেকে সামান্যই জেগে থাকে বুকের মাংসল অংশটা। ‘হস্তিনী’ বলে এমন মেয়েদের, যাদের চেহারা বড়, কিন্তু বুক। ছােট, বলেছে পাপিয়া। ওর ছােটবেলার বন্ধু, পাশের গলিতেই বাড়ি। দুই বােন ওরা, দুজনেই ক্রিকেট খেলে খুব ভাল। স্টেট লেভেল টুর্নামেন্ট খেলেছে। চোয়াড়ে, পুরুষালি চেহারার পাপিয়া লেসবিয়ান। একদিন জোর করে সুনন্দার জামা খুলিয়েছিল। আয়নায় নিজের বেমানান নগ্নতার দিকে তাকিয়ে রইল সুনন্দা। বেসিনের ধারে সিগারেটটা পুড়ছে। ছাইটা ঝেড়ে নিয়ে একটা লম্বা টান দিল। পাপিয়া সেদিন ওর বুক দেখে উৎসাহ হারিয়েছিল। ব্যাপারটা তারপর আর এগােয়নি। তিনতলার ছাদের ঘরে, ক্যানভাসের। খাটটায় মুখােমুখি বসে ছিল ওরা দু’জনে। পাপিয়া টি-শার্টটা ওর দিকে ঠেলে দিয়ে কেমন একটা নিরাসক্ত ভাবে বলেছিল, “পরে নে জামাটা।” অথচ সেই শীতের দুপুরে সুনন্দা শারীরিকভাবে খুব চাইছিল ব্যাপারটা আরও কিছুক্ষণ চলুক। গােপন উত্তেজনায় শিউরে উঠছিল ও। গভীর থেকে সাড়া দিচ্ছিল ওর মেয়ে শরীর। কিন্তু ওকে দেখে হতাশ হয়েছিল পাপিয়া। সুনন্দা টিশার্টটা পরে ফেলার পরই উঠে গিয়ে জানলাটা হাট করে খুলে দিয়েছিল। একরাশ আলাে ঘরের মধ্যে ঢুকে যেন আরও স্পষ্ট করে দিয়েছিল মেয়ে হিসেবে সুনন্দার খামতিটা। পাপিয়া একটা সিগারেট ধরিয়ে জানলার বাইরে তাকিয়ে বলেছিল, “সরি রে, তাের সঙ্গে আমার এটা করা উচিত হয়নি। তুই তাে আমার মতাে লেসবিয়ান নস, তুই স্ট্রেট। খুব ভুল হয়ে যাচ্ছিল! আর কোনওদিন করব না এমন।…..

…..চেহারা ভারী হয়ে গিয়েছে। আগে একেবারে বেতের মতাে হিলহিলে শরীর ছিল। ভারী বুক, ভারী পাছা, সরু কোমর। বাড়ি সদর দরজা থেকে হেঁটে গিয়ে গাড়িতে ওঠা পর্যন্ত যেটুকু সময়, পাড়ার ছেলে থেকে বুড়াে, সবাই হাঁ করে গিলত। এখন মুটিয়ে গিয়েছেন, কিন্তু একই রকম সুন্দর। ঠিক দুর্গা প্রতিমার মতাে। উত্তর কলকাতার বনেদি বাড়ির বউয়েরা যেমন হয়।…

…..শাম্ব ওর শরীরের সঙ্গে নিজের শরীর ঠেসে ধরে দাঁড়িয়ে। শাম্বর ঠোঁট ওর কণ্ঠার হাড়ে চেপে বসেছে। শাম্বর হাত ঘুরছে ওর সারা শরীরে। সুনন্দার হাত দুটো কিন্তু নিষ্ক্রিয়,….হঠাৎই ঢেউ উঠল সমুদ্রে। শাম্ব যেন কোনও দুঃসাহসী নাবিক, মুখ নামাল সুনন্দার স্তনসন্ধিতে। ছটফটিয়ে উঠল সুনন্দা। দু’হাতে শাম্বকে ঠেলে সরিয়ে দিতে-দিতে বলল, “কেউ দেখে ফেলবে!”….

……বারণ করেনি সুনন্দা, করতে পারেনি। ওর শুধু ভয় করল, কেউ যদি দেখে ফেলে। শাম্ব নিজের শরীর দিয়ে ওকে ঠেলে নিয়ে গেল দরজার পাশের দেওয়ালের গায়ে, ঠেসে ধরল একেবারে, তারপর শাম্বর ঠোঁট চেপে বসল ওর ঠোঁটে। সেখান থেকে গলায়, কাঁধে, বুকে। শাম্বর গালে না কামানাে দাড়ি, সুনন্দার খোঁচা। লাগছে। ব্যথা না, ভাল লাগছে। গলার ধারে, কানের পিছনে মুখ ঘষছে শাম্ব। ওই অবস্থাতেই কী একটা জিজ্ঞেস করল। বুঝতে পারল না সুনন্দা। নিজের মাথাটা ছাড়িয়ে নিয়ে, ফিসফিসিয়ে বলল, “কী বলছ?”…..“উফ,” অস্ফুটে কাতরে উঠল সুনন্দা। শাম্ব ঘাড় থেকে মুখ সরিয়ে বলল, “আমি বিড়াল হলে তুই হচ্ছিস একটা ইঁদুর। সাদা ইদুর। রােববার হাতিবাগানের হাটে বিক্রি হয় দেখেছিস? সাদা ইঁদুর, লাল-লাল চোখ? আয়, তােকে আজ খেয়ে ফেলি!” ম্যাক্সির ওপর দিয়েই সুনন্দার বুকে কামড় বসাল শাম্ব। আলতাে কামড়। আদরের কামড়। তারপর ম্যাক্সির আলগা গলা দিয়ে হাত ঢুকিয়ে দিল। ভিতরে ব্রা পরে নেই সুনন্দা। ওর বাঁদিকের বুকের দখল নিয়েছে শাম্বর ডান হাত। চেপে ধরছে, ছেড়ে দিচ্ছে, আবার খামচে ধরছে। যেন বাচ্চা ছেলের হাতে নতুন খেলনা। একটু-একটু ব্যথা লাগছে সুনন্দার, কিন্তু ভাল লাগছে খুব। শাম্বর অন্য হাতটা সুনন্দার শিরদাঁড়া বেয়ে পিছলে নেমে এসে থামল কোমরে। তারপর আরও নীচে। ক্ষুধার্ত জানােয়ারের মত খামচে ধরল। ওর নখ বসে যাচ্ছে নরম মাংসে। যেন ওর শরীর ছিড়ে নিতে চাইছে শাম্ব। একটা দামাল হাওয়ার মত তছনছ করছে ওর সর্বস্ব। যেন আজকে, এখনই লুট করে নিয়ে যাবে এই ষােলাে বছর ধরে সযত্নে সাজিয়ে তােলা সুনন্দার নারীত্ব। কিন্তু ওর ভয় করছে না। খারাপ লাগছে না। বরং অসম্ভব এক উথালপাথাল হচ্ছে ভিতরে! ওরও যেন তর সইছে।…..নিজেকে ছেড়ে দিতে! এমন এর আগে কখনও হয়নি। বাড়িতে ছিল বলে ম্যাক্সির নীচে প্যান্টিও পরেনি সুনন্দা। ও বুঝতে পারছে, ওর উরুসন্ধি থেকে আহ্লাদের তরল স্রোত গড়িয়ে নামছে দুই পা বেয়ে। সুনন্দা দু’হাতে জড়িয়ে ধরল শাম্বর কোমর। টেনে আনতে চাইল নিজের দিকে। শাম্ব ততক্ষণে টেনে হিঁচড়ে ওর ম্যাক্সিটা টেনে নামিয়েছে কাঁধের ওপর থেকে। সুনন্দার বাঁদিকের বুক উন্মুক্ত লােভাত শাম্বর সামনে। মুখ নামাল শাম্ব। দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরল স্তনবৃন্ত। “উফ, লাগে?” এবার কঁকিয়ে উঠল সুনন্দা। থতমত খেয়ে থেমে গেল শাম্ব। অপ্রস্তুত মুখ তুলল, “লাগল? সরি!” “তােমরা এত দস্যিপনা করাে কেন! কেন এত লাগিয়ে দাও!” কপট রাগে বলল সুনন্দা। ওকে দুহাতে জাপটে ধরে নিজের সঙ্গে মিশিয়ে নিল শাম্ব। হাত দিয়ে ওর চিবুকটা উঁচু করে ধরে ভুরু কুঁচকে বলল, “তােমরা মানে! আর কে?” “কী ‘আর কে’?” সুনন্দার গলায় আদুরে বিড়ালের ঘড়ঘড়ানি। ওকে একটা ঝাঁকুনি দিল শাম্ব। রাগী গলায় বলল, “আর কে তাের সঙ্গে এইসব করে?” একবারই, শুধু একবারই সুমনদা, ওর বন্ধু বিপাশার পিসতুতাে দাদা, বিপাশাদের বাড়িতে সুনন্দাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খাওয়ার চেষ্টা করেছিল। ওই একবারই। আনাড়ির মতাে চুমু খেতে গিয়ে কামড়ে দিয়েছিল ঠোঁটে। দাগ হয়ে গিয়েছিল। তখন সুনন্দা সবে তেরাে। কিন্তু সুমনের নামটা শাম্বকে বলল না সুনন্দা। ও একটা পাল্টা ঝাঁকুনি দিয়ে বলল, “বলব না?” শাম্ব ওকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল, “যেই হােক, বারণ করে দিবি?” খুব ভাল লাগল সুনন্দার। শাম্বর এই অধিকারবােধে, এই রাগের আদরে সুনন্দা জ্বলন্ত মােমবাতির মতাে গলে যেতে যেতে কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে বলল, “কী বলব? তুমি বারণ করেছ? বলব?” শাম্ব জবাব না দিয়ে ঠোঁট ছোঁয়াল ওর। কানের পেছনে। চুমু খেল কানের লতিতে। চোয়ালের হাড়ে, গলায়। সারা শরীর ঝিমঝিম করে উঠল সুনন্দার। ভাল লাগায় অবশ হয়ে যাচ্ছিল ও ভিতরে-ভিতরে। শাম্বকে, ওর ছােড়দার বন্ধুকে, নিজের শরীর দিয়ে প্রায় পিষতে-পিষতে ও প্রায় গােঙানির মতাে বলে উঠল, “আদর করাে। আদর করাে।”……

…..সুনন্দার বুক থেকে মাথা তুলল শাম্ব। ঘাড় ঘুরিয়ে চেঁচিয়ে বলল, “আরে বল নর্দমার নালির মধ্যে ঢুকে গিয়েছিল তাে! বের করেছি। আসছিইই।” বলেই ঝপ করে সুনন্দাকে ছেড়ে, পায়ের কাছে পড়ে থাকা ক্যাম্বিস বলটা তুলে নিল। ঝুঁকে পড়ে বাসনমাজার কলটা খুলে বলটা অকারণেই একবার ধুয়ে নিল। তারপর আর একবারের জন্যেও সুনন্দার দিকে না তাকিয়ে দরজা দিয়ে বেরিয়ে ছুট লাগাল বাইরের উঠোনের দিকে। দরজার পাশের দেওয়ালে মাথা হেলিয়ে দাঁড়াল সুনন্দা। এখনও ওর নিশ্বাস পড়ছে ঘনঘন। উত্তেজনায় ওঠানামা করছে আদুরে পায়রার মতাে বুকজোড়া। মাথা ভার। এখনও শরীরে রক্তকণিকাদের দৌড়ােদৌড়ি থামেনি। এখনও ভাল লাগায় আর্দ্র ওর উরুসন্ধি। এখনও নিজেকে সমর্পণে প্রস্তুত ও। কিন্তু ফিরেও তাকাল না শাম্ব।……

…..কিন্তু ও কিছু ভেবে ওঠার আগেই গ্রিলের বারান্দায় উদয় হল সােনাদার বউ। একেবারে বাবুয়ার মুখােমুখি। কী নাম যেন? হ্যাঁ, শীলা। খুব টাইট একটা হাতকাটা গেঞ্জি পরে আছে শীলাবউদি। তলাতেও ওরকম চাপা স্ন্যাক্স জাতীয় কিছু একটা। তাদের পাতলা কাপড় ছিড়ে, বুক আর পাছা মনে হচ্ছে ফেটে বেরিয়ে আসবে। ভয়ঙ্কর চাপে পড়ে গেল বাবুয়া। অদ্ভুতভাবে গেঞ্জির অস্থানেকুস্থানে ঘাম জমে আছে। বগলের কাছে, বুকজোড়ার নীচে, পায়ের ফাঁকে। তাকাতে অস্বস্তি হচ্ছে। বাবুয়া বুঝতে পারছে ওর কান লাল হয়ে গিয়েছে। ওর হাল দেখে ঠোট কামড়ে হাসল বউদি। তারপর চোখ মটকে বলল, “এক্সাসাইজ করছিলাম তাে, তাই ঘেমে গেছি। তােমাদের দাদা একটা যন্তর কিনে দিয়েছে, এক জায়গায় দাঁড়িয়ে সাইকেল চালানাের মতাে করা যায়। সেইটা করছিলাম। রােজ আমাকে বলে আমি নাকি মােটা হয়ে যাচ্ছি। আচ্ছা দেখাে তাে, আমাকে কি মােটা লাগে?” অদ্ভুতভাবে একটা হাত পাছার উপর রেখে, বুকজোড়া আরও ঠেলে তুলে ওর দিকে পাশ ফিরে দাঁড়াল বউদি। বাবুয়া সেদিকে দেখবে কী, ওর কান-মাথা ঝাঁ ঝাঁ করছে। কোনওমতে বলল, “সােনাদা বাড়ি নেই?”……

……আবার বাবুয়া চুমু খেল তিলটায়। তারপর ছুটকির মুখটা ধরে চুমু খেল ওর ঠোঁটে।। বাধা দিচ্ছে না সুনন্দা। ওর ঠোট থেকে বাবুয়া মুখ নামাল গলায়, বুকের মাঝখানে। সুনন্দা দু’হাতে বাবুয়ার মাথাটা নিজের বুকে চেপে ধরল। জোরে। থরথর করে কাঁপছে ওর সারা শরীর। সর্বাঙ্গে আলােড়ন তুলে ফিরে আসছে চোদ্দ বছর আগের স্মৃতি। তখন ও সবে ষােলাে বছরের লাজুক কিশােরী। আর শাম্ব এক দুর্মদ তরুণ। ওর শরীর, মন তছনছ করে দিয়েছিল শাম্ব। দস্যুর মতাে লুটে নিয়ে গিয়েছিল ওর সর্বস্ব। দেমাকি! ও দেমাকি! মিথ্যে কথা বলেছে শাম্ব। মিথ্যে! ওর কাছে যতটা নির্লজ্জ হতে পেরেছিল সুনন্দা, আর কারও কাছে হয়নি। জীবনের সমস্ত চাওয়া নিয়ে সর্বনাশের আশায় দু’হাত বাড়িয়ে বসে থেকেছে, কিন্তু শাম্ব ফিরে তাকায়নি। আর এখন। সুনন্দাকে শুনতে হচ্ছে, ও নাকি দেমাকি। মিথুক, মিথুক। বাবুয়া পাগলের মতাে মুখ ঘষছে ওর বুকে। যন্ত্রণায় কাতরে উঠল সুনন্দা। দেবতার মতাে রূপবান ওই চেহারা আজ ওর চোখের সামনে জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে গেল। এক মুহূর্তে!……

Leave a Reply