উপন্যাস সমগ্র-৩ – সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়

›› উপন্যাসের অংশ বিশেষ  

এখন আমার কোনাে অসুখ নেই

………আলপনা আসত পুরােপুরি পােশাকপরিচ্ছদ পরে। শীতে এমন-কি, সত্যি-সত্যি চাদর গায়ে দিয়ে আসত। তার আগে হিটার জ্বালিয়ে হাত গরম করে আসতে হত প্রতুলকে। ঠাণ্ডা তালু আলপনা সইতে পারেনা। এসব নিজে জল গরম করে এনে হটব্যাগ নিয়ে শুতে আসার আগের কথা। তারপর শুরু হয় বস্ত্রহরণপর্ব। সত্যি, এ একটা সেরিমােনিবটে। পুরাে চ্যাপ্টার হতে পারে একটি নভেলের। যেন, শাে-উনডাের ডামিরশাড়ি খােলা হচ্ছে এমন অটুটভাবে বসে সে দ্যাখে। একটু সাহায্য না করলে, নড়েচড়েনা-বসলে, একবারটি পাছা না-তুললে শাড়ি,শায়া,ব্লাউজ মায় ব্রেসিয়ার—এতসব খােলা যায়? শেষাবধি হাত পড়েশায়ার দড়িতে। আলপনা অবশ্য এমন মেয়েলি মৌলিকভাবেফাঁস দেয় যে, ছােটবড় যে-কোনােটাতেইটান দাও, ফস করে খুলে যায়। এ রকমফাঁসেররহস্য প্রতুল জানেনা। ছােটরজায়গায় বড়টি ভুল করে টেনে ছােটবেলারআগরপাড়ার কালাে প্যান্টে কতবার দারুণ গিট পড়ে গেছে।

অবশেষে আসে শেষ বাধা, স্বয়ংশায়া। এতক্ষণ দর্শকদের মতাে দেখে গেলেও, আলপনার মধ্যে এই প্রথম স্পন্দন লক্ষ করা যায়। সে চঞ্চল হয়ে পড়ে। প্রতুলও আর পারে না। তার হাতের কাঁপন এখান থেকেই শুরু হয়, এইশায়া-নামানাে থেকে। হৃৎস্পন্দন লাফেলাফে বাড়ে। | বস্তুত, কাম্য রমণীকে পাবার শেষ বাধা শায়া, খােলার আগে, কবে কোন পুরুষের এ-কথা মনে না-হয়েছে যে খােলার তুলনায় এটাবরং ছিড়ে ফেলাই যুক্তিসঙ্গত?……….

……..পুরীতে আলপনা সেই প্রথম এলাে শায়া ও ব্রেসিয়ার পরে। উজ্জ্বল ও বলশালী সাদা নারী শরীরে স্বতঃস্ফূর্তকালােশায়া প্রতুলের সেই প্রথম।……..প্রতুল রােগা, লম্বা তার গড়ন;মুখ, পা,গ্রীবা, হাত, হাতের আঙুল তার সবইলম্বাপানা। সে যে একটু কুঁজো হয়ে হাঁটে, সেটা বােধহয়ত তার দীর্ঘতর যৌনতার কারণেই। তুলনায় আলপনা একটি সলিড ও স্টাউট রমণী। ভালবাসাবাসিরপরযারা গলে যায় না। যারা, বােঝা যায়, তারপরেও থাকে। ঐ হেঁটে বাথরুমে যাচ্ছে সে ও তার ভারি ও অটুট নিতম্ব, যা ছিল এবং ঐ এখনাে রয়েছে।……

……আজ ব্রেসিয়ার খােলার সময় আলপনা গম্ভীর সাহায্য করে।

সমুদ্রের অগ্রপশ্চাৎজল ও গাঁজলা নিয়ে দু’বছর ধরে ক্রীড়ারত সাবধানী ও চতুর সিংহিনীর পিঠের ওপর চূর্ণ হবার মুহূর্তটা নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে আমূল আছড়ে পড়ে প্রতুল। আলপনার ঠোঁটে সেই একবারই পায় কবেকার সমুদ্রের নুন। চওড়া সমতল পেট, একমাত্র ফুলের গাছে যেমন অদ্বিতীয়কুঁড়ি, অমনিবালিকা-নাভিকেঘিরে চেপে ধরে চতুর্দিকথেকেজড়াে হয়েছে প্রতিরক্ষাকারী তার সমস্ত শরীর, চওড়া পেলভিস, বালি-খরখরে নিতম্বের ঘন মাংসঢেউ, তার উত্থান ও পতন সে পায়, সে তার চেয়ে চওড়া আলপনার রিস্ট, তুলনাহীনভাবে বেশিরীরক্ষমতা দিয়ে দু’হাতে চেপেরাখে দুদিকে। আলপনার ঠেটি লম্বা হয়ে চলে যায় প্রতুলের প্রায় আলজিভপর্যন্ত টানলে | এতদূর বাড়ে নাকিআলপনাআগে জানত না তাে প্রতুল!আলপনা তার জিভ ব্যবহার করতে দেয়, সেই প্রথম।………

আমি আরব গেরিলাদের সমর্থন করি

আমরা ডাঙায়। তুমি ভেসে যাচ্ছ! তােমার একটা কিছু হবে, তবে না আমরা ভাসব। এই ওকি হচ্ছে, হাত সরাও।
দুজনের মধ্যবর্তী শূন্যতা পেরিয়ে রানার আজানুলম্বিত হাতের তর্জনী সবে জয়ন্তীর বাম বৃন্তটি পেয়েছে। সে বলল, তবে আর বেঁচে উঠলাম কী জন্যে?
‘এই জন্যে?
তা ছাড়া, আর কী। তুমিই বলাে না। নয়ত বলতে হয়, নাদুদত্তকে লেঙ্গি মেরে সাঁইথিয়ার কাজটা বাগাবার জন্যে। নিশ্চয়ই তা নয়।
শােন কথা! এর পরে জয়ন্তী এপাশ ফিরে একটু এগিয়ে না এসে পারেনা। এতেইরানা হাত বাড়িয়ে তার দুটি অনমনীয় স্তনের একটির পুরােটা পায়। আ, বেঁচে থাকার এই সব ছিটেফোঁটা! ডুবে যেতে যেতে নুলিয়ার থ্রি-পিস মেছাে নৌকার পাটার নাগাল পাওয়ার ব্রাহ্মণ্য মহিমার কাছে এরা নিঃসন্দেহে সিডিউর্ল্ড কাস্ট। কিন্তু দুটিতেই রয়েছে প্রাপ্তির যে অব্যক্ত ‘আহ’—সেদিক থেকে এদের তুলনা একটা হয় বৈকি!
‘এবার বলাে। আমার বুকে হাত দিয়ে বলছ কিন্তু।………

রিক্তের যাত্রায় জাগাে

………সুজাতার বাম স্তন হাতের তালুতে তখনও ধরে আছে গৌরব। বােকার মতাে সে আবারও উখিত বােধ করছে। সে নির্বিকারভাবে পুনঃপ্রবেশের জন্য উদ্যোগী হতে যাচ্ছে, এমন সময় চোখ খুলে সুজাতা বলল, ‘গৌরব, এতটা পশুর মতন ব্যবহার কোরাে না। আমি কুকুরি নই পথের। যাওয়ার আগে অন্তত একটা স্মৃতি নিয়ে যেতে দাও, যাতে তােমাকে একটু সম্মান করতে পারি। গৌরবের মুঠি থেকে মুক্তি পেয়ে সুজাতার বাম স্তন তার বুকের ওপর এতদিনে শিথিল হয়ে ছড়িয়ে পড়ল। | ‘তােমার ছেলের নাম কি জানাে? নাম রেখেছে পিয়ানাে। কী সুন্দর নাম। কৃষ্ণা তােমাকে বলতে বলেছে। চিৎহয়ে সুজাতা শেষ সংবাদ জানায়। নিরঞবড় বড় চোখ মেলে কড়িকাঠের দিকে তাকিয়ে থাকে। যােনি পর্যন্ত নগ্ন, তবু একটু চাদরটানার ক্ষমতা তার নেই।………

এখন জীবন অনেক বেশি সতেজ স্বাস্থ্যে ভরা

………আমাদের পরিচয়ের একেবারে গােড়ার দিকেবলা, কল্লোলের প্রথম যৌন অভিজ্ঞতার গল্পটি ভােলার নয়। বিশেষত, কুয়াশার বিশাল ডানা ঝেড়ে সে গল্পটি আমাকে যে ভাবে বলে। যে ভাষায়।

যদিও অতগুলাে বছর ধরেমাগিতার যােনির মধ্যে সঞ্চয় করে রেখেছিল কিছুগননাকক্কাস। এতবলে,তার খােলা-বােতাম লােমবহুল বুকেফঁদিতেদিতে, কল্লোল তার প্রথম যৌন অভিজ্ঞতার বর্ণনায় ইতি টানে।…..

……..চারতলার ছাদে বাঁশের খুঁটিতে টাঙানাে দু’সেট তার একটি পঁয়তাল্লিশ ডিগ্রি কোণ রচনা করেছে। রায়বাড়ির দুইগৃহবধূরােজ সকালে যে যার তারে নিজেদের জামাকাপড়টাঙাতে ছাদে | ওঠে। বেশ ভাের-ভােরই আসে তারা। যে জন্যে সে সময় ক্বচিৎ চোখে পড়েছে নিখিলের। তখন অন্তবস্ত্র বলে গায়ে থাকেনা কিছু। শুধু একখানা ভিজেশাড়ি জড়ানাে, সর্বাঙ্গে।…..দুটি কোনাকুনিতারে প্রায় একইক্রম অনুসারে জামাকাপড় শুকোয়, এমনকি। যেমন (বাঁদিক থেকে), প্রথমে চেক লুঙ্গি,তারপরশার্ট, হাত-অলা | গেঞ্জি ও জাঙ্গিয়া (আগের আমলে ফতুয়া ঝুলত) তারপর ট্রাউজার্স (ওল্টানাে), তারপরশাড়ি, সায়া ও ব্লাউজ এবং সবশেষে মাত্র একটি ক্লিপ থেকে ব্রেসিয়ার (লম্বালম্বি)।……..একটা ব্যাপার লক্ষ্য করে বেশ মজা পায় সে। জামাকাপড়ের ক্রমবিন্যাস প্রায় হুবহু এক হওয়া সত্ত্বেও (এবং দুটি ক্রমই শুরু হয়ে থাকে বাঁদিক থেকে), তবু, তার দুটি কোনাকুনিভাবেটাঙানাে আছে। বলে, তাদের ক্রমন্যাস চোখে কত বিপরীতাত্মক দেখায়। জ্যামিতির ভাষায় ভূমি সংলগ্ন বাহুতে ক্রম শুরু হয়েছে চেক লুঙ্গি দিয়ে এবং শেষ হয়েছে (পূর্বেইবলা হয়েছে)বড়বউ-এর ব্রেসিয়ারে। অপিচ, কোণসংলগ্ন বিসমবাহুর শুরু কিন্তু লুঙ্গিদিয়ে নয়, বরং নিঃসন্দেহে ছােট বউ-এর ব্রেসিয়ার দিয়েই। অর্থাৎ যেখানে বড় বউ-এর শেষ। — – এসব নিয়ে বেশি মাথা ঘামাতে নেই। যদিও একটি তারের শেষ এবং অপরটির শুরু (নাকি শেষ?) ,দুটি ক্ষেত্রেই একটি ক্লিপ থেকে ব্রেসিয়ার ঝােলে বলে, তারা পাশাপাশি ঝােলে বলে ও তারা লম্বালম্বি ঝােলে বলে, এটা লক্ষ্য না করে পারা যায় না (নিখিল পারেনি যে,বড়বউ-এরস্তনযুগল ছােট-রতুলনায় এক সাইজ বড়ই।…….

……মনে পড়ে প্রথম দিন নমিতার পরনে ছিল দামি ঢাকাই। বুঝেছিল, আটপৌরে বলতে ওর আর কিছু নেই। পরার মতাে। যাইহােক, যত রােগাই দেখাক, ওর খােলা কোমরের মারাত্মক খাঁজটি ও তার পরেই ঈষৎ উথলে-ওঠা নিতম্বের যৎকিঞ্চিৎকল্লোল দেখে নিচ্ছে—ওর চোখের মণির নড়াচড়া থেকে নিখিল তৎক্ষণাৎবুঝে ফেলে।….

……১৯৮৭ থেকেটানা চার বছর।

যমুনার সঙ্গে নিখিলের মেলামেশার হেডিং একটাই হতে পারে:কাজে কম, কথা বেশি। পার্কে, রেস্তোরাঁয় এবং কোথায়-নয় বসা ট্রেনে ব্যান্ডেল বা বাসে ডায়মন্ডহারবার—বিস্তর হাঁটাহাঁটি। শােয়া কম। গুনে-গেঁথে রাখলে বড়জোর পঞ্চাশ পেরােত। সংখ্যার দিক থেকে ডলির সঙ্গেটানা যৌনতার তুলনায় (মাসে গড়ে দশ ধরলেও তাে হাজার দুই) তা নগণ্য ঠিকই। তবে কিনা, যৌনতার গুণগত দিকের হিসেব তাে অঙ্ক দিয়ে হয় না।

খেলাচ্ছলে একদিন, রেস্তোরাঁর বিলের উল্টোপিঠে, প্রথম সঙ্গম পর্যন্ত, একটা দিনপঞ্জি তৈরি করে দিয়েছিল যমুনা (মৌখিক ধারাবিবরণী-সহ)। তার গােল্লা-গােল্লা হাতের লেখায় সে ছেড়া পাতা নিখিল বহুবার পড়েছে। যথা:প্রথম কথাবার্তা, পিপিং, ১৭ সেপ্টেম্বর। ২২ সেপ্টেম্বর মাওয়ালি’ দেখলাম হিন্দ-এ৷ জিতেন্দ্র আর শ্রীদেবী।৭টাকার ডি-সি’তে। শ্ৰী ফোর টোয়েন্টির পর তােমার প্রথম হিন্দি ছবি। পুজোর ক’দিন তােমার বউ অমিকে নিয়ে থাকবে বাপের বাড়িতে। সপ্তমীর দিন তােমাদের ফ্ল্যাটে ডাকলে। ব্লাউজ খুললে এবং অনেক চুমু খেলে। স্টুপিডের মতাে জানতে চাইলে, এই কি আমার প্রথম? আমি বললাম, নইলে ঠোঁট এত লাল হয় ? ফোলে ? অষ্টমীর দিন পারফিউম কিনে দিলে। দশমীর দিন জোকায় নিয়ে গেলে, বন্ধুর বাগানবাড়িতে। সেখানে আরও নতুন কিছু হল। সব অ্যালাও করলাম। কিন্তু সেদিনও দুর্গরক্ষা করলাম।(হা, কোথায় লাগে রানী লক্ষ্মীবাঈ-নিখিল।)আরও মাস দেড়েকপরে। নভেম্বর দ্য টেনথ। আবার ডাকলে তােমার দিনভরের জন্য খালি ফ্ল্যাটে। সকাল-সকাল চলে গেলাম। দুপুরে বাবার মৃত্যুর ব্যাপারটা বলতে গিয়ে ভেঙে পড়লাম। তারপর কী করে কী হয়ে গেল সত্যিই বুঝতে পারিনি। শুধুতােমার কণ্ঠস্বরের মধ্যে দিয়ে বাবার গলা শুনতে পাচ্ছিলাম আগােগােড়া। একটা মাইক্রোফোন মনে হচ্ছিল তােমাকে। এবং একবার নয়। ইউ ডিড দ্যাট টোয়াইস। আধঘণ্টার মধ্যে। ইনঅর্ডার টু লিভ অ্যান ইমপ্রেশান অন মি। যেহেতু প্রথমবার তাড়াতাড়ি হয়ে যায়। দু’মিনিটও লাগেনি তােমার। কিন্তু তার দরকার ছিল না। এ-সবে কতক্ষণ সময় লাগে, কতক্ষম লাগা উচিত— আমার কিছুই জানা ছিল না। অ্যান্ড থ্যাঙ্কস ফর ইওর এক্সপার্টাইজ অ্যান্ড সিমপ্যাথি—প্রথমদিকে ছাড়া কোনও কষ্টও হয়নি তেমন। আর দ্বিতীয়বারে তাে অনেকক্ষণ। অ্যান্ড, আইডিড কাম অন দ্য সেকেন্ড টাইম। আমার অর্গাজম হয়নি? বলাে না? তুমি তাে সব জানাে। সবার নাকি হয় না।

ডলির হয় না। মনে পড়ল নিখিলের। তার চেয়েও যা শােচনীয়, এ জন্যে সে একটুও বঞ্চিত বােধ করে না।………

…….ডলির নরম যৌন-মেশিনে হাজার-হাজারবার মােবিল ঢালার তুলনায় যমুনার সঙ্গে সে যত কমবারইহােক, প্রতিবার জলতলে তলিয়ে যাওয়া—যখনই এ প্রতিতুলনা এসে হাজির হয়েছে, যমুনার প্রতি কৃতজ্ঞতার বদলে—ডলির জন্য ঘৃণাতেই তা পর্যবসিত হয়েছে বারবার।………

…..আজ দ্রৌপদীর পরনে কালাে ভয়েলের ঢলঢলে ব্লাউজ, নিশ্চয়ই নমিতার। ব্রেসিয়ারটি হয়ত তারই, ফিতে বেরিয়ে আছে, এবং নতুন। ঊরুর কাছে নীলচে কালাে স্ট্রাইপ সিল্কের শাড়ির কয়েকটি কোঁচ সে মসৃণ করছে মাথা নিচু করে।…….আসছি কাকু। যাওয়ার আগে দ্রৌপদী বলে গেল নিখিলকে। পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে গেল কল্লোলকে। সিল্কের শাড়ির সঙ্গে সেঁটে থাকা ওর পরিণতিকামী তবু পরিপূর্ণ নিতম্বের চলমান ঘাত-প্রতিঘাত থেকে একটা আগুনের ফুলকি এসে লাগল আমার গায়ে। আমি দাউদাউ করে জ্বলে উঠলাম। খণ্ড-কাগজের মতাে। প্রখর ছাই হয়ে পড়ে রইলাম তারপর।……

Leave a Reply