আদি মধ্য অন্ত – সমরেশ বসু

›› গল্পের অংশ বিশেষ  ›› বই এর অংশ / সংক্ষেপিত  

আদি

………সুপূর্ণ ঘরের বন্ধ দরজাটার দিকে একবার দেখে নিল। কারণ শৈবাল যে কেবল ওর হাতদুটো টেনে বুকের ওপর নিল, তা নয়। ওকেও টেবিলের পাশ দিয়ে বুকের অনেকটা কাছে টেনে নিল। ঈসৎ বাধা দেবার চেষ্টা করলো। ফলে সবুজ বনে লাল ফুল ছাপানাে পিওর সিল্কের শাড়ির আঁচল খসলাে। শাড়ির সঙ্গে অভিন্ন রঙের মেশানাে জামায়, অনম্র উদ্ভিন্ন বুকের একদিক উদাস। অতি অনুজ্জ্বল ওষ্ঠরঞ্জনী মাখা পুষ্ট ঠোট টিপে, ওর স্বাভাবিক সরু ভ্রুকুটি চোখে শৈবালকে হানলাে। কপালের সামনে, ছাটাই করা নরম কালাে চুলের গােছ এসে পড়েছে প্রায় ওর দীর্ঘায়ত কালাে চোখের ওপর।

“কী করছে? এটা তাে তােমার অফিস ঘর বলেই জানি। দরজাটাও খােলা।” “ভুল কথা একটাও বলেনি।” শৈবাল ওর ঝকমকে দাতে হেসে, সুপূর্ণাকে কোনাে অবকাশ না দিয়েই ঝটিতি প্রায় বুকের সংলগ্ন করলাে, “কেবল ভুলে গেছ, দরজার বাইরে একজন বেয়ারা আছে। আর দরজার বাইরে, লাল বাতিটার সুইচ আমি আগেই অন্ করে দিয়েছি। যাকে বলে রক্ত চক্ষুর নিষেধ-সংকেত।” সুপূর্ণা দেখল, ওর বুকে ঠেকেছে শৈবালের কপাল। পােশাকে-আশাকে আর বাকচাতুর্যে যত আধুনিকই হােক, বুকের স্পর্শে একটা শিহরিত লজ্জাকে চাপা দায়। বদ্ধ ঘরে তৃতীয় ব্যক্তি না থাকলেও কোনােরকমে শৈবালের হাত থেকে, একটা হাত ছাড়িয়ে, ওর মাথাটা সরিয়ে দিল।……..

পাপবােধ

……….ঘরের দক্ষিণের দেওয়ালের কাছে উজ্জ্বল আলাে আড়াল করে দাড়িয়েছিল একটি রমণী মূর্তি। সামনের দিকে সেই মূর্তি একেবারে অস্পষ্ট দেখাচ্ছিল না। অথচ শিবতােষ চিনতে পারছিল না। মূতির গায়ে ছিল অতি মিহি সাদা জমির শাড়ি, যার গাঢ় নীল বা কালাে পাড়ের মাঝখানে সােনালী ডােরা চিকচিক করছিল। তার কোমরের নিচে কোনাে অন্তর্বাস ছিল না। উজ্জ্বল আলােয় সেই পাতলা মিহি সাদা জমির ভিতর থেকে রমণী মূর্তির সুগঠিত উরু জংঘা ও নিম্নাঙ্গের মধ্যস্থল পর্যন্ত যেন অস্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল। গায়ে তার জামা ছিল না। সামনের দিকে ছায়া পড়লেও, শাড়ির অতি মিহি আঁচলে ঢাকা অনম্ৰ বুক জোড়া প্রায় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল। তার ডান দিকে সুগঠিত কঁাধ ছিল খােলা। বাঁ দিকের কঁাধের ওপারে শাড়ির সেই সােনালি ডােরা গাঢ় নীল বা কালাে পাড় আঁচল লুটোচ্ছিল। বাঁ হাতের কিছুটা ঢাকা পড়েছিল শাড়িতে। ডান হাত ছিল অনাবৃত। মাথায় ঘােমটা ছিল না। রাশিকৃত কালাে দীর্ঘ কেশ এলে হয়ে ছড়িয়ে ছিল পিঠের দিকে। মূর্তির প্রতিমার মতাে ফর্সা মুখে ও ঠোটে ছিল যেন ঈষৎ হাসি। কালাে আয়ত চোখ ছিল শিবতােষের দিকে। শিবতাষের ঘ্রাণে সেই মদির গন্ধ বাতাসের ঝাপটায় আরও নিবিড় হয়ে আসছিল। আর নানা সংশয় সন্দেহের মধ্যেও, তার বারেবারেই মনে হয়েছিল ঐ মূর্তি আরতির! তাই সে ফিরতে গিয়েও ফিরতে পারে নি। সে অস্ফুট স্বরে জিজ্ঞেস করেছিল, “কে? কে ওখানে?”………..

Leave a Reply