জিম গিলমাের নতুন এসেছে, হর্টনস বে শহরে। কানাডা থেকে হর্টন বড়োর কামারশালাটা জিম কিনে নেয়। ঘােড়ার ভালাে নাল তৈরী করতে আর পরাতে সে ছিল ওস্তাদ। ছিমহান চেহারা, দেখে মনে হত না পরিশ্রমী বলে। দোকান ঘরের ওপর তলায় সে থাকতাে, আর স্মিথ পরিবারে খাওয়া দাওয়া করতাে।
মিঃ স্মিথের বাড়িতে লিজা কোটস কাজ করতাে। লিজা সব সময় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে কাজ কর্ম করতাে, মিসেস স্মিথ রচিশীল ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, লিজার কাজ পছন্দ হত।
লিজার পা দুখানি জিমের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে ভারী সুন্দর পা দুটি। সর্বদা সে পরে থাকতাে সাদা ধবধবে একটা ঘাঘরা আর পাটে পাটে মাথার চুলগুলি অাঁচড়ানাে। তবে জিমের মনে তেমন কোন আতিশয্য নেই, সে লিজার কথা চিন্তা করে না। | লিজার ভীষণ ভালাে লেগেছে জিমকে। অনেক সময় সে রান্নাঘরের চৌকাঠ পেরিয়ে এসে জিমের চলার ভঙ্গীটুকু দেখার অপেক্ষায় দাড়িয়ে থাকে। এমন কি জিমের গোঁফ দুটিও লিজার মনে ধরেছে।
জিম হাসলে সাদা সারিবদ্ধ দাঁতগুলি বেরিয়ে পড়ে লিজার তাও ভালাে লাগে। কামার শালার হাতুড়িওলাদের মত ঠোঁকে দেখতে নয়, তার জন্য লিজা মনে মনে আনন্দ অনুভব করে। এখন লিজার মনে হল জিমের পেশীবহল বলিষ্ঠ হাতের ওপরকার কালাে চুলগুলিও তার ভালাে লাগছে, তার তাহার যে অংশটা জামায় ঢাকা সেই অংশটা খােলা অংশটার চেয়ে কী ভীষণ রকম ফরসা। সব মিলিয়ে এই ভালাে লাগায় অবাক হয়ে যায় লিজা। দারুণ মজার !
একেবারে সদর রাস্তার ওপর মাত্র পাঁচ খানা বাড়ি– এক পারে শালেভয়, অন্য পারে বয়েন সিটি। পরপর স্মিথ, ট্রাউড, ডিলওয়ান হর্টন ও ভ্যান হাসেনদের বাড়ি আর সবরকমের দোকনপত্র এবং পােষ্ট অফিস নিয়ে একটা বাড়ি। এই নিয়ে ছােট্ট শহর হর্টনস বে। এখানে বেলেমাটিই বেশী, সব।
বাড়িতেই দেবদারু গাছ খাড়া হয়ে উঠেছে। রাস্তার দুই ধারে উচু জমিতে চাষ হয়। তারও ওপরে শহরে একমাত্র ছােট্ট স্কুলবাড়ি আর মেথডিস্ট চার্চ। কামারশালার লাল বাড়িটা ঠিক স্কুলের সামনেই।
পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে একটা বেলেমাটির রাস্তা চলে গেছে, দুধারে বড় বড় গাছ। স্মিথের বাড়ির খিড়কির দরজা দিয়ে পরিস্কার দেখা যায় যে, বনাঞ্চল পার হয়ে হ্রদের ধারে উপসাগরের মুখে পেীছে এই পথ শেষ হয়েছে। গ্রীষ্মকালে আর বসন্তকালে অপব রুপ ধারণ করে আর নীল ও উজ্জ্বল দেখায় উপসাগরটা। লিজা অনেক সময় মালবােঝাই নৌকাগুলাে হুদের জলে ভেসে বয়েন সিটির দিকে চলেছে এই দরজা দিয়ে দেখে। দেখে মনে হয় নৌকাগুলাে যেন দাঁড়িয়ে আছে চুপচাপ কিন্তু ঘরে ডিস ধুয়ে রেখে ফিরে এসে দেখে কতদূরে চলে গেছে। বিস্ময় এসে ঘিরে ধরে লিজাকে।
জিম গিলমাের চিন্তায় আজকাল লিজার মন ভরে আছে। জিম কেবল স্মিথের সঙ্গে নানারকম কথা বলে-দোকান, রিপাবলিকান পাটি, জেমস ব্রেইন, আরাে কত কি। ড্রয়িংরুমে সন্ধ্যার পর বসে হয়তাে টোলেডে রেড বা “গ্রাণ্ড র্যাপিড়’ সংবাদ পত্র পড়ে। আবার কোন কোনদিন স্মিথের সঙ্গে জ্যাকলাইট নিয়ে মাছ ধরতে যায়। এইভাবে দিন কেটে যায়।
কিছুদিন কেটে যাওয়ার পর একদিন হরিণ শিকারের জন্য ওজন স্মিথ এবং চালি ওয়াম্যান গাড়িতে করে পাইনবনে গেল, সঙ্গেনিল তাঁর কুড়ল, রাইফেল এবং দুটি কুকুর। ওরা শিকারে যাবে বলে চারদিন আগে থেকে মিসেস স্মিথ আর লিজা খাবার-দাবার আয়ােজন করছে। এই সুযােগে জিমের জন্য বিশেষ একটা খাবার তৈরী করার ইচ্ছে হয়েছিল লিজার। কিন্তু লজ্জায় হল না। প্রয়ােজন ছিল একটু বেওর আর ময়দা, সেটুকু সাহস ভর করে চাইতে সাহস পেল না মিসেস স্মিথের কাছে। বাইরে থেকে যে কিনে আনবে তাও হল না, যদি বা রান্নার সময় মিসেস স্মিথ বুঝতে পারেন। খুব সম্ভব এসব কিছুই হত না, তবু লিজার মনে ভয় এসে বাধা দিয়েছিল।
জিমরা চলে যাওয়ার পর লিজার যেন দিনই কাটে না। জিমকে না দেখতে পেয়ে লিজা অস্বস্তি অনুভব করে। রাত্রে জিমের কথা চিন্তা করে ভালাে করে ঘনতে পারে না। তবে যেমন কষ্ট পায়, তেমনি জিমের কথা ভাবলেও আনন্দ। জিমরা ফিরে আসার আগের দিন চোখে ঘুম এল না লিজার, ছটফট করে কাটালাে সারা রাত, বেশীক্ষণ সময় তন্দ্রাচ্ছন্নের মধ্যে কাটায়, যতটুকুঘুমোয় স্বপ্ন দেখে জিমের, এই রকম যন্ত্ৰণার মধ্যে লিজার সারারাত কাটল।
পরদিন যখন দুরে জিমের গাড়ি আসছে দেখতে পেল, তখন লিজা নিজেকে দুর্বল অবসন্ন মনে করলো, মাথাটা যেন ঘুরতে থাকে। একটা আকুলতা সারা মন-প্রাণ জুড়ে আচ্ছন্ন হয়ে আছে। কোন প্রকার একবার জিমকে না দেখতে পেলে মনকে কিছুতেই প্রবােধ দিতে পারবে না।
তার মনে যে ক্লান্তি, দুর্বলতা, অসুখ ভাব, সবই এক নিমেষে উড়ে যাবে জিমকে দেখা মাত্রই। কেমন যেন সারা দেহে চাঞ্চল্য ভাব, মনে জেগেছে শিহরণ।
গাড়িটা এসে দেবদারু গাছের নীচে থামতেই লিজা আর মিসেস স্মিথ বাইরে বেরিয়ে দাঁড়াল। শিকারের নেশায় কেউই দাড়ি কামানাের ফুরসৎ পায় নি, প্রত্যেকের মুখে একগাল গোঁফ দাড়ি।
তিনটি হরিণের দেহ গাড়ির মধ্যে পড়ে আছে ? মিসেস স্মিথ তাঁর স্বামীকে চুমু খেলেন, বিনিময়ে আবেগ ভরে স্মিথ জড়িয়ে ধরলেন। লিজার মুখের দিকে তাকিয়ে জিম বলে উঠলাে—হ্যালাে লিজ ?
এই সম্বােধনে লিজার চোখ মুখ লাল হয়ে উঠল। মনে মনে উজ্জ্বল আনন্দ উপলদ্ধি করলাে। | জিম হরিণ তিনটেকে টেনে নীচে নামাল, একটা বেশকড়। মেয়েদের চোখে মুখে ফুটে উঠলাে খুশীর অভিব্যক্তি।
মিষ্টি হেসে লিজা প্রশ্ন করে-ওটা তুমি মেরোছো, না জিম ?
জিম মাথা নেড়ে বলে—হ্যা, আমিই মেরেছি, খুব চমৎকার হরিণটাকে দেখতে, না ?
চমৎকার দাঁত বের করে লিজা মধুর ভঙ্গীতে হাসল।
চালি ওয়াম্যান সেই রাত্রে স্মিথদের বাড়িতেই রয়ে গেল। এক পেট খেয়ে আবার ন্যাল ভয়তে ফিরে যাওয়া যায় না। স্মিথ খাওয়ায় আগে প্রশ্ন করলেন—জিম সেই পাত্রে কিছু আছে নাকি?
-আছে। বলেই জিম উঠে চলে গেল।
পাত্রটি গাড়ির মধ্যে ছিল। ওতে চার গ্যালন হইকি ধরে। অবশ্য তাতে যা হইকি ছিল তার ওজনও কম নয়। জিম দুহাতে পাত্রটি অতি সহজে মুখের কাছে এনে চুমুক দিল। শার্টের সামনের দিকটা কিছুটা ভিজে গেল।
জিমের কাণ্ড কারখানা দেখে চার্লি এবং স্মিথ দুজনেই মুখ টিপে হাসতে লাগলাে।
লিজা তিনটি গ্লাস এনে দিল।
চালি স্মিথের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে—তােমার সম্মানের খাতিরেই এই মদ পান করছি
-আমি পান করছি ঐ বিরাট হরিণটার খাতিরে, স্মিথ বললেন। জিম বললাে—আর আমি, যাদের শিকার করতে পারিনি তাদের উদ্দেশ্যে পান করছি—বলেই সে এক চুমুকে শেষ করল গ্লাসটা।
—ও হাে। —অমত ! —ঠিক এই সময়ে এর চেয়ে সাচ্চা আর কিছুই পাওয়া যায় না। —আর এক গ্লাস চলবে নাকি ?
চলতেই হবে। জিমের ভারী ভালাে লেগেছে। হইস্কির এই চমৎকার স্বাদ আর তার ধীর বিলম্বিত প্রতিক্রিয়া ওর বেশ লাগে।
ভালাে মদ, ভালাে খাবার আর নরম আরামপণ বিছার কাছে কোন কিছুই পাত্তা পায় না ! আঃ-অপব! তিনজনেরই বেশ রীতিমত নেশা হয়েছে। অকোত্ৰাজ্ঞান কেউ হারায়নি।
লিজা টেবিলের ওপর সমস্ত রকম খাদ্য সাজিয়ে নিল, সেও আহারে বসলাে। চমৎকার রান্না হয়েছে। খাবার টেবিলের পুরষ শরিকা বেশ গম্ভীর কায়দায় একটা অস্বাভাবিক ভঙ্গি নিয়ে সেই সব ভােজ্যদ্রব্য পরমানন্দে উপভােগ করতে লাগলেন।
আহার পর্ব শেষ করে পুরুষরা সবাই আবার ড্রয়িংরুমে এসে বসলেন।
লিজা আর মিসেস স্মিথ দুজনে হাতে হাতে টেবিলের সব কাজ সেরে ওপরের ঘরে উঠে এল। খানিক পরে স্মিথও চলে এলেন ওপরের ঘরে। ড্রয়িংরমে কেবল জিম আর চালি বকবক করছে।
লিজা ফিরে এল রান্না ঘরে। গরম উনুনের পাশে একটা বই নিয়ে বসে রইল। চোখ তার বইয়ের পাতায় কিন্তু মন পড়ে রয়েছে জিমের পদধ্বনি শােনার অপেক্ষায়। জিম হয়তাে ড্রইং-রম থেকে এখনই উঠে নিজের শােবার ঘরে যাবে। তখন চোখ ভরে দেখবে লিজা জিমকে। | সেই যে একটু দেখা, তার স্মৃতিটুকু নিয়ে চলবে মনের গভীরে রােমন্থন। সেই মুখের স্পর্শ গায়ে মেখে ও ঘরে গিয়ে বিছানায় শােবে।
যখন জিমের চিন্তায় লিজা মশগুল তখন জিম ড্রয়িংরুম থেকে বেরিয়ে এল। তার চোখদুটি জলছে, মাথার চুলগুলাে উসকো-খুসকো ? লিজা তাড়াতাড়ি ওদিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নেয়। দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বইয়ের পাতায়।
জিম এসে পেছনে দাঁড়িয়েছে। তার উষ্ণ নিঃবাস স্পর্শ করছে লিজার পিঠে। কয়েকটি অস্বস্তিকর মুহত। তারপর অকস্মাৎ সজোরে জড়িয়ে ধরল জিম। জিমের বাহুর পেছনে লিজার স্তন যুগল দৃঢ় হয়ে উঠলাে। ভীষণ ভয় করে লিজার।
আজ পর্যন্ত কেউ ওর দেহ স্পর্শ করেনি, এভাবে জড়িয়ে ধরেনি। আজ বল-নাচের ভঙ্গিতে নিবিড় বাহ বন্ধনে জিম লিজাকে বেধেছে। লিজা কি করবে।
নিজের মনকে সান্ত্বনা দেয় লিজা—এ যে আমার দেহের দুয়ারে ভিক্ষা নিতে এসেছে। নিজেকে নিবেদন করছে ।
কিন্তু ভয় দূর হয় না, কি যে হবে, কি ঘটবে কে জানে। সে যেন কাঠের পুতুল হয়ে গেছে। পেছন থেকে জিমের প্রলম্বিত চুমার তার দুটি ঠোঁটে আগুন ধরিয়ে দেয়।
কি অসহ্য পুলক, কি সুতীব্র অনুভতি অপরিসীম সুখ। এ যেন আনন্দপূর্ণ বেদনাময় অনভূতি।
জিম চেয়ারের পেছনে থাকা স্পর্শ সারা দেহে সুতীব্র শিহরণ এনেছে। | সারা অঙ্গ থরথর করে কাঁপছে। এ অসহ্য! কিন্তু একটা কোমল মিষ্টি আবেশ সারা দেহকে কেমন অবশ করে দিয়েছে। আর দেরী নয়, লিজা জিমকে চায়, এখনি, এই মুহতেই ওকে চাই।
নীচু স্বরে জিম বলে—চলাে লিজা, একটু বেড়িয়ে আসি। লিজা মুখে কিছু বলে না। দেয়ালের গায়ে হকে টাঙানাে কোটটা তুলে নিয়ে পরল। তারপর দুজনে বেরিয়ে পড়ল, দুজনেই নিবাক।
আঠাল বেলেমাটির রাস্তা ধরে দুজনে হেটে চললো, গােড়ালি পর্যন্ত বসে যেতে লাগলাে। জিম এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরেছে লিজাকে। | কিছুটা যাওয়ার পরে থেমে যায় দুজনে। তন্ধ আবেগে দুজনে দুজনকে জড়িয়ে ধরে। চুমায় চুমায় ভরিয়ে দেয় মন, বুকের মধ্যে টেনে নেয়।
আকাশে এখন আর চাঁদ নেই। চারিদিকে অন্ধকার। ঘন গাছপালার মধ্যে দিয়ে দুজনে পায়ে পায়ে এগিয়ে চলেছে। হ্রদের ধারে গিয়ে হাজির হল, যেখানে ডক, পাশেই গুদামঘর, দুদামঘরে স্তুপ করা কাঠের গায়ে জলের ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে।
কেবল বিরতিবিহীন জল কল্লোল ছাড়া আর কিছুই শােনা যাচ্ছে না।
কনকনে শীত জলে লিজার ঠাণ্ডা লাগছে না। জিমের সংস্পশে তার দেহ উত্তপ্ত হয়ে গেছে।
গুদাম ঘরের সেই নিভৃত অন্ধকারে আশ্রয় নিয়েছে দুজনে, নিবিড় ভাবে কাছে টেনে নিয়েছে জিম লিজাকে। লিজার সমস্ত শরীর উত্তেজনায় কাঁপছে, আত্মসমর্পণের সময় হয়েছে, অথচ অন্তরদ্বিধায় জড়িয়ে আছে। | জিমের একটা হাত চলে যায় লিজার জামার বোতামে। আচম্বিতে খুলে ফেলে জামার বােতাম, নাড়াচাড়া করছে লিজার স্তন-দয় নিয়ে।
জিমের এই কাণ্ড দেখে ভয় করছে। কি যে তার মনের ইচ্ছাবাঝা যায় । অথচ তার সঙ্গলাভে ঘনিষ্ঠ হয়ে জড়িয়ে থাকতে ভালো লাগে। লিজার কণ্ঠে অনুনয়-না জিম লক্ষীটি ! কিন্তু শুনে না জিম।
ছিঃ জিম। অমন করো না, জিম। কিন্তু জিমের অবাধ্য হাত থাকতে চায় না।
জিম এইবার তার পােষাক খুলে ফেলেছে কি যে হবে এইবার, লিজা ভেবে পায় না। আতঙ্ক এসে জড়িয়ে ধরে। কিন্তু মন জিমকে কিছুতেই ছাড়তে চায় না। জিমকেও চাই।
—শােনাে জিম, একটু থামো। অমন করাে না, লক্ষাটি। আকুতি ঝরে পরে লিজার কঠে।
না লিজা, কোন কথা নয়। আজ আমাদের দুজনকে দুজনের দরকার।
-না না, এ বড় অন্যায়। কোন প্রয়ােজন নেই। জিম আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে, থামো, থামাে। আঃ
এখানকার এই পাটাতনে কাঠগুলি বেশ শক্ত। উচু নীচু। অস্বস্তি বােধ করে লিজা। জিম এখন অঘোরে ঘুমিয়ে পড়েছে। নিশ্চল ভঙ্গীতে পড়ে আছে জিম। কোন রকমে মুক্ত করে নিল লিজা। জিমের ঘুম না ভাঙ্গিয়ে সন্তর্পণে উঠে দাঁড়াল। তারপর নিজের পােষাক ঠিক করে নিয়ে চুলগুলাে পরিপাটি করে নিল দুই হাতে।
জিম একই ভাবে অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে। অল্প ফাঁক রয়েছে দু ঠোঁটের মাঝে। নীচু হয়ে লিজা একটা চুমু খেয়ে নেয়।
লিজা এবার মাথাটায় নাড়া দিল। কোন সাড়া নেই জিমের, মাথাটা ওপাশে গড়িয়ে গেল।
এতক্ষণে লিজা আকুলকরা কান্না কাঁদতে থাকে।
উকের ধারে পৌছে জলের দিকে লিজা অনেকক্ষণ চেয়ে রইল। জলের ওপর বেশ ঘন কুয়াশার মেঘ নেমেছে।
কনকনে শীত, লিজার শীত করছে। মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে যায়, নিজেকে ভীষণ একা একা মনে হয়। এই মাত্র যেন তার সমস্ত সম্পদ লুঠ হয়ে গেছে। সে এখন নিঃস্ব, রিক্ত।
বেশ জোরে জোরে লিজা জিমকে ধাক্কা দেয়, কিন্তু জিমের কোন জ্ঞান নেই। কাঁদতে থাকে লিজা। বাঁধ ভাঙ্গা চোধ্বে জলে বুক ভেসে গে) বলে— জিম, জিম, শােন জিম।
জিম একটু নড়ে চড়ে পাশ ফিরে ভালাে করে শুয়ে পড়া। নিজের গায়ের কোটটা খুলে জিমের গায়ে দিয়ে দিল। জামার প্রাক্তটা পায়ের তলায় জড়িয়ে দিল। অবশেষে লিজা উঠে দাঁড়ালাে। দুধই বলে মাটির রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফিরতে হবে। কিন্তু চোখে কি ঘুম আসবে ? চারিদিকে কুয়াশায় ঢাকা। নিবিড় কুয়াশায় পথ আচ্ছন্ন।