প্রথম পর্ব : মন্থরা
…..দশরথের ধাতু দুর্বল, এই ব্যাপারটা যে আমার মাথায় এসেছিল, তা বিন্দুমাত্র ভুল ছিল না। কিন্তু কামনায় একেবারে ছটফট করতেন দশরথ। বাড়িতে তিন মহিষী ছাড়াও ছিলেন আরও তিনশত বাহান্ন জন স্ত্রী। ভাবা যায়! এদের সঙ্গে নিয়মিত লিপ্ত হতেন তিনি স্বাদ বদলে বদলে। স্বাদ বদলের প্রসঙ্গ তুলছি কারণ তাঁর এইসব পত্নীদের মধ্যে এমনকী বৈশ্য এবং শূদ্র কন্যাও ছিলেন। কিন্তু সম্ভোগই সার। সন্তানের দেখা নেই। এরপর যে তিনি কিছু একটা নতুন চাল চালবেন তা আমার বিলক্ষণ মনে হয়েছিল। পুত্র কামনায় তিনি পুত্রেষ্ঠি যজ্ঞের আয়োজন করলেন। বিরাট হোমযজ্ঞ, বহু লোক সমাগম, ব্রাহ্মণ ভোজন, দরিদ্রদের ধন বিতরণ সবই হল। যজ্ঞের শেষ লগ্নে হঠাৎ এক অপূর্ব দর্শন যুবকের দেখা মিলল। যেমন তিনি পেশিবহুল, তেমনই তাঁর গভীর চোখ। তিনি যজ্ঞের আগুনের মধ্য থেকে উঠে এসেছিলেন বলে আমার বিশ্বাস হয়নি। কিন্তু তিনি যে কখন যজ্ঞাগারে এলেন, কখন সকলের সামনে এসে দাঁড়ালেন সেটাও ঠাহর করতে পারিনি।
কোনও গুপ্ত পথে তাঁকে প্রাসাদে প্রবেশ করানো হয়েছিল? কোন দেশের মানুষ তিনি? তা জানা যায়নি। অত্যন্ত উচ্চ পর্যায়ের গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়েছিল। রাজা দশরথ ছাড়া আর কাউকেই তাঁর সঙ্গে কথা বলতে দেখিনি। শুধু দেখেছি দশরথ যুবককে কিছু বললেন, আর তিনি পায়েসের পাত্র হাতে রানিদের কক্ষের দিকে এগিয়ে গেলেন। কখন তিনি কোন রানির কক্ষে প্রবেশ করলেন, কতদিন প্রাসাদে রইলেন, কখনই বা বিদায় নিলেন কিছুই জ← পারা গেল না। শুধু মাসকয়েক পর রাজবৈদ্য তিন রানিকে পরীক্ষা করে জানালেন তাঁরা প্রত্যেকেই গর্ভবর্তী হয়েছেন। এমন কখনও হয় !
রাজার প্রাসাদ বলে, যা বলছে তাই সাধারণ মানুষকে বিশ্বাস করে নিতে হবে? কোনও যুক্তি প্রতিযুক্তি বলে কিছু থাকবে না? এ কেমন কথা? কিন্তু পিঠে কুঁজওলা কুৎসিৎ এক দাসীর কথা আর কে শুনতে যাচ্ছে? মানুষ রাজ-অনুগত হয়ে থাকতেই ভালোবাসে। তাই রাজবাড়ি থেকে যখন বলা হয়েছে যে রানিরা পায়েস খেয়ে গর্ভবতী হয়েছেন, তো সেটাই সত্যি। রাজার যৌনক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে কে আর খামোখা শূলে চড়তে চাইবেন?
যাই হোক, রানিরা গর্ভবতী হয়ে পড়ার পর রানিদের কক্ষে রাজার আসা যাওয়া আগের চেয়ে অনেক কমে গেল। দাই আর চিকিৎসকরা বেশি করে যাতায়াত করতে লাগল। একদিন দুপুরে পান সেজে নিয়ে কৈকেয়ীর ঘরে গেলাম। মনে যা কিছু খচখচ করছিল ওই যুবক আর পায়েস নিয়ে, সেসব একটু দোনামোনা করে জিজ্ঞাসাই করে বসলাম – সত্যি কথাটা বলোতো, বলি ছেলে-পুলে পেটে এল কোথা থেকে?’ কৈকেয়ী বললেন, ‘কেন পায়েস খেয়ে!’ কৈকেয়ীর চোখে সেই দুষ্টু হাসিটা খেলে গেল। বললেন, ‘কুঁজি সেই যুবককে তোর মনে আছে যিনি যজ্ঞ থেকে উঠে এসেছিলেন?’ আমি মাথা নেড়ে সায় দেওয়ায় বললেন, “চিন্তা করিস না, অমন সুন্দর দেখতে যুবরাজরাই ঘর আলো করে আসবে।’ আমার আর বুঝতে বাকি রইল না কিছু।…..
দ্বিতীয় পর্ব : : শূর্পণখা
…..কোনও রাজকুমার আমার রূপে মোহিত হয়েছে। কামনায় কেঁপে গিয়েছে। ভেবেছে একে ভোগ না করলে পুরুষ জন্মই বৃথা! আবার কারও চোখে আমি লোভ দেখেছি, যারা ভেবেছে আমায় বিয়ে করে লঙ্কার বিরাট রাজ্যের ভাগ পাবে আগামী দিনে। এই দুই শ্রেণির রাজা রাজকুমারদের আমি ঘৃণার চোখে দেখেছি। একদলের বীর্য ধারণ করে রাখার দুর্বলতা, আর এক দল তাকিয়ে আমার মাধ্যমে কি পাওয়া যায় তার দিকে। তাই কাউকেই আমার পছন্দ হয়নি।
যুবকের মুখ পুকুরের অন্য পাশে ঘোরানো। আমি কেবল তাকে পিছন থেকে দেখতে লাগলাম। সে আমায় দেখতে পেল না। প্রশস্ত পিঠ, কয়েকটি ঘন তিল, পিঠের উপর ছড়ানো চুল, পেশিবহুল দুটি হাত, সুগঠিত কোমর, একফালি কাপড়ে মোড়া মজবুত নিতম্ব, নিটোল উরু, গোড়ালি… খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে থাকলাম। মনে মনে শরীরটা মিলে গেল বিদ্যুৎ-এর সঙ্গে। শরীর অবশ হতে শুরু করল। যোনিপথ সিক্ত হল। বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর আর মিলন হয়নি কারও সঙ্গে….
….পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম যুবককে। হতচকিত যুবককে মুখ খোলার সুযোগ না দিয়ে বললাম, ‘তুমি যে-ই হও, আমি তোমায় কামনা করছি। আমায় গ্রহণ করো।’
যুবকের পিঠে যখন পিষ্ট করে দিচ্ছি আমার স্তন, এক ঝটকায় আমায় ফেলে দিল সে। জলে পড়লাম। আক্ষরিক অর্থেই এবার যুবকের মুখ দেখলাম প্রথমবার। বিদ্যুৎ-এর মতো নয়। কিন্তু যেন তার চেয়েও সুন্দর। টানা টানা চোখে কি অদ্ভুত মায়া। কপালে যেন দিব্যজ্যোতি। জলে পড়ে থেকেই তাকে দেখতে লাগলাম। আর যুবক দ্রুত জল থেকে উঠে পাড়ে রেখে আসা বস্ত্র শরীরে জড়িয়ে নিলেন। প্রশ্ন করলেন, আপনি কে দেবী?
পুরুষকে জিতে নিতে নারীর যৌনশক্তি কখনও ব্যর্থ হয়নি। যখনই কেউ আঁচল খসিয়েছে, বা নিরাভরণ হয়েছে, মিলেছে সাফল্য। আমি স্পষ্ট বুঝেছি, রামকে আমার পেতেই হবে। নাহলে বিদ্যুৎ-এর হত্যাকারী রাবণ রাজাকে শেষ করবে কে? তাঁকে শরীরে গ্রহণ করার সুখ থেকেই বা কেন নিজেকে বঞ্চিত করব? তাই রামকে পেতে আমি সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করব।
ফের যৌনতার অস্ত্রই প্রয়োগ করলাম। রাম যখন স্নান করছিলেন, পুকুরে নেমে পড়লাম। সিক্ত বসনে তাঁর দিকে চেয়ে বললাম, ‘আমায় বিয়ে করে নিন। আমি আপনাকে খুব সুখে রাখব।’ প্রায় অপ্রত্যাশিত ভাবে রাম বললেন, ‘আমি যেন তাঁর ভাই লক্ষণকে বিয়ে করে নিই।’…..
তৃতীয় পর্ব : তারা
…..সুগ্রীব যে আমার সঙ্গে বিছানায় গিয়েছে এ সম্বন্ধে নিশ্চিত ছিল বালী। তাই ভাইকে একেবারে সমান সমান শাস্তি ফিরিয়ে দিতে সে বলপূর্বক উপর্যুপরি সঙ্গমে বাধ্য করল রুমাকে। টানা কয়েকদিন চলল এই শাস্তি। ঘর থেকে শোনা যেতে লাগল রুমার চীৎকার। যারা গোপনে সুগ্রীবের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে বলে সে সন্দেহ করত, তাদেরকে তারিয়ে তারিয়ে বলল ভাইয়ের স্ত্রী-সত্ত্বে কাহিনি। কিন্তু একটা ব্যাপার খেয়াল করার মতো, বালী নিজে জানলেও কাউকে জানতে দিল না যে, সুগ্রীব আমার ঘরে রাত কাটিয়েছে। বালী এ ব্যাপারে আমার উপর কোনও রকম চোটপাটও করেনি। আমার যেটা মনে হয়েছে তা হল, বালীর ধারণা আমার ইচ্ছায় নয়, সুগ্রীবই জোর করে আমায় শরীরে বাধ্য করেছে। সে জন্যই বালী বলপ্রয়োগ করেছে রুমার সঙ্গে। আর দ্বিতীয়ত, নিজের স্ত্রী ভাইয়ের শয্যাসঙ্গিনী হয়েছে, এই কথাটা সে বাইরে কাউকে জানাতে দিতে চায়নি কারণ এতে তার পৌরুষে আঘাত লেগেছে।
রাজা হয়ে আমায় সত্যিই মাথায় করে রাখল সুগ্রীব। অনেকখানি ক্ষমতা আমার হাতে এসে পড়ল। রাজ্যের সমস্ত সিদ্ধান্তই আমার সঙ্গে আলোচনার পর তবে তা কার্যকর করলেন সভাসদরা। আর চরম ভোগে নিজেকে ভাসিয়ে দিল সুগ্রীব। বহু উপপত্নীর সঙ্গে উপগত হল সে। আর প্রায় সারা দিন মদিরায় ডুবে থাকল। সঙ্গম আর সুরাপান, এককথায় চূড়ান্ত ভোগবিলাসে নিজেকে ভাসিয়ে দিল সে। আমার একটা জমা কষ্ট ছিল সুগ্রীবের জন্য। মনে হতো দাদার দাপটে বেচারার জীবনটাকে শান্তি করে উপভোগেরই সুযোগ মেলেনি। তাই রাজা হয়ে যতবার সে কোনও না কোনও উপপত্নীর ঘর থেকে সঙ্গমে তৃপ্ত হয়ে বেরিয়েছে, আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে অলিন্দ দিয়ে হেঁটে গিয়েছে, আমার ভালো লেগেছে। মাতাল হয়ে সে যখন গুহাপ্রাসাদের চূড়ায় দাঁড়িয়ে গান ধরেছে, আমার ভালো লেগেছে। মাঝরাতে ছাদে হঠাৎ আমাকে দেখে চমকে গিয়ে, তারপর হাঁটু মুড়ে বসে সে যখন বলেছে ‘রানি…’, আমার ভালো লেগেছে। আমি তাকে এমন সুখী, তৃপ্তই দেখতে চেয়েছি।…..