যার যা ভূমিকা – সমরেশ বসু

›› উপন্যাসের অংশ বিশেষ  

……মেয়েটির মুখ একটু যেন চেনা চেনাই লাগছে। কোথায় দেখেছি, মনে করতে পারছি না। পাড়বিহীন গােলাপী শাড়ি, আর গােলাপী রঙের জামা। জামার হাতা, কঁাধে চিলতে মত আছে। চোখে আমার পড়েছে ঠিকই, নাভির নীচে তার শাড়ির বন্ধনী, জামা বুকের নীচেই শেষ, অতএব পেট এবং নাভিদেশ সহ কোমরের স্ফীত অংশও কিঞ্চিৎ চোখে পড়ে।…..

…..আমি সুদীপ্তার দিকে ফিরে তাকালাম। আমার দৃষ্টি পড়ল, শাড়ি-ব্লাউজ থেকে মুক্ত, ওর পেট, নাভিস্থল এবং কোমরের কিছু অংশে। সুদীপ্তা যেন তাতে একটু লজ্জা পেল। শাড়ি দিয়ে, মুক্ত অংশ ঢাকতে চাইল, তবু যেন ঢাকা পড়ল না, এবং কোমরে মােচড় দিয়ে, ও একটু নড়ে চড়ে বসল, আমার দিকে চেয়ে হাসল। | আমি হেসে চোখ সরালাম, কিন্তু মনে মনে স্বীকার না করে পারলাম না, সুদীপ্তার সুগঠিত শরীরের একটি আকর্ষণ আছে। ওর পেটে কোথাও মেদ নেই, সুবর্ত নাভির চারপাশ পাতলা এবং মসৃণ, এবং কটির নীচে কোমরের যে অংশটুকু বেরিয়ে আছে, তার বৃত্তের সুঠাম বিস্তৃতি দেখে, বােঝা যায়, ওর কোমর সুন্দর। বুকের গঠন মাঝারি, গ্রীবা দীর্ঘ। পুরুষের চোখ, এতে একটু মুগ্ধ হলে, তাকে দোষ দেওয়া যায় না।……

…..এরকম নাভির নীচে শাড়ি পরা, কাধ আর বগল কাটা, পেট বের করা জামা পরা, আজকাল চলতি ফ্যাশান। এসব দেখলে সকলের মেজাজ খারাপ। এসবের তাে আজকাল খুবই সমালােচনা। কিন্তু হাঁ করে চেয়ে দেখবার বেলায় তােত, নজর একেবারে খাড়া। কেবল খাড়া কেন, আরাে ফাক-টাক কোথাও আছে কী , চোখ দিয়ে তাও খুঁজে মরে। তখন তাে আমার মনে হয়, টপলেস পােশাক পরে, এদের সামনে দিয়ে চলে যাই। লােয়ারলেটা নিজেরই ভাবতে কেমন গা শিরশিরিয়ে ওঠে। ক্ষতিই বা কী। ওরা গালাগাল দিলেও চেয়ে দেখবে, হাততালি শিস দেবে, চান্স পেলে, ধরে ছিড়ে খাবে।……

…..তা বলে, চোখে পড়বার জন্য, অদ্ভুত একটা কিছু করতে চাই । আর এও চাই না, প্রকাণ্ড একটা ভুড়ি বের করে, নাভির নীচে শাড়ি পরে রাস্তায় বেরােব, কিংবা আটচল্লিশ ইঞ্চি বুক নিয়ে, পেট-কাটা জামা গায়ে দিয়ে বেরােব। কী অখাদ্য দেখতে লাগে। তবু অনেকেই ওরকম বেরােয়।…..

…..এমন কি আর আশ্চর্য ঘটনা, ওরকম বয়সের লােকেরা, আমাকে হামেশাই দেখেন। কিন্তু উনি বারে বারেই আমার পেট নাভি আর কোমরের দিকে দেখছিলেন। খিদেয় পেট চুই চুই করছে, মশাই তখন আমার নাভি আর পেট দেখছিলেন।…..

…….একবার গাছের দিকে তাকিয়ে, পাখী না কী যেন দেখলেন, অন্ততঃ সেরকম ভাব করলেন, তারপরে আমার দিকে এক পা এগিয়ে এসে দাড়ালেন। মাথা নীচু করে, (উনি আমার থেকে অনেক লম্বা) আমার খােলা জায়গায়, বারে বারে দেখতে লাগলেন। আমিও ব্যাগটা এ হাত ও হাত করতে গিয়ে, কাপড় সরিয়ে একেবারে নাভির আর কোমরের খােলা অংশ ওঁকে দেখতে দিলাম, মনে মনে বললাম, ‘নিন দেখুন, কী দেখবেন।…..

……জিমনাসিয়ামের মাস্টার বিমলদা আমাকে খুব যত্ন করেই শেখাত । সুদেহী বলে, কয়েকবার পুরস্কার পেয়েছে বিমলদা। আজও বিয়ে করে নি, আজীবন নাকি ব্রহ্মচারী থাকবে। কিন্তু, বিমলদাকে আমি অন্যরকম চিনেছি। বিমলদা আমার গায়ে হাত দিলে, আমার অস্বস্তি এবং ভাল দুই-ই লাগত। বিশেষ বিশেষ জায়গায়, বিশেষ বিশেষ ভাবে হাত দেবার মধ্যে যে একটা বিশেষ ব্যাপার আছে, সেটা আমি বুঝতে পারতাম, কিন্তু বিমলদা এমন ভাব করত যে, তার যেন ওসব খেয়ালই নেই। অথচ, এগারাে-বারাে বছরের মেয়ে আমি, আমার রক্তের মধ্যে কীরকম দপদপিয়ে উঠত। আমার মনে মনে ভীষণ লজ্জা করত, ভয় পেতাম। বিমলদা তাে শরীরের সব জায়গাতেই হাত দিত, যেন আমি একটা কাদার ড্যালা। কিন্তু সত্যি কাদার ড্যালায়, ওভাবে হাত দিয়ে, শিউরে তােলা যায় না। এমনও হয়েছে, আমার হাতে পায়ে শক্তি থাকত না। | প্রথম পিকক করাবার সময়, নাভির কাছে দুই কনুই রেখে, মাটির দিকে উপুড় হয়ে, সমস্ত শরীরটাকে যখন বাঁকিয়ে তুলতে যেতাম, পারতাম না। বিমলদা, আমার বুকে আর তলপেটের নিচে, প্যান্টির (ছােট্ট জাঙি পরেই খেলা শিখতে হত, আর গায়ে হাতাওয়ালা গেঞ্জির মত টাইট জামা।) তলায় হাত দিয়ে তুলে ধরে রাখার চেষ্টা করত। আমি বুঝতে পারতাম, প্রথম দু তিন বারের পরে, বিমলদার হাত কী রকম যেন করত।

এটা শুধু আমার ব্যাপারে না, আরাে অন্যান্য মেয়েদের বেলায়ও তাই। পরে আমরা এই নিয়ে, নিজেদের মধ্যে গল্প করতাম। তবে, শরীরের এসব বিষয়, আমি আরাে ছেলেবেলা থেকেই জানি। এক ঘরে, আমরা এতগুলাে ভাই বােন থাকতাম যে, যাকে বলে পশুবৃত্তি, সব থেকে সহজে যে সব সুখগুলাে আয়ত্ত করা যায়, অথবা আপনা থেকেই এসে পড়ে, সেসব অনেক আগেই জানা হয়ে গিয়েছিল। লজ্জার মাথা খেয়ে, স্বীকার করতেই হয়, আমাদের মাসী-মেসো খেলা, আমরা নিজেরাই খেলতাম। আমাদের চোখে, সব ছেলেমেয়েদের চোখেই, মাসী-মেসাের কোন ব্যাপারই তত গােপন ছিল না। পাকামি ইতরতা বলতে যা বােঝায়, তা সবই জানা হয়ে গিয়েছিল। তবু কোথায় যেন একটা ভয়ও ছিল, একটা অন্যায়ের ভাব, খারাপ। একটু বড় হবার পরে, যখন আর একটা নতুন ব্যাপার শরীরে ঘটল, মা হবার যােগ্যতা—যােগ্যতা না ছাই, একটা নতুন বিপদ আর ভয় এসে শরীরে দেখা দিয়েছিল, তখন মনের দিক থেকে, কেমন একটা ঘাড় বাঁকানাে ভাবও এসেছিল, “কোন ছেলে আর আমার গায়ের কাছে এস না।……

…..আমি সবে ওপরের জামাটা খুলেছি, ব্রেসিয়ার তখনাে গায়ে, কোমরে স্কার্ট। দীনেশ এসে ঢুকেছিল। ঢুকেই দরজাটা ভিতর থেকে বন্ধ করে একেবারে আমাকে জড়িয়ে ধরেছিল। আমি বলে উঠেছিলাম, কী করছেন দীনেশদা, দরজাটা খুলে দিন। সবাই কী ভাববে।

আর ভাববে! দীনেশ অসুরের মত ব্যবহার করেছিল। স্কার্টটা একটানে খুলে দিয়েছিল, আমি চিৎকার করব ভেবেও, পারিনি, ফুপিয়ে কেঁদে উঠেছিলাম, বলেছিলাম, ‘পায়ে পড়ি দীনেশদা, ছেড়ে দিন।

তখন দীনেশ আমার প্যান্টিটা টানাটানি করছে। না পেরে শেষটায় এত জোরে টেনেছিল, ওটা ছিড়েই গিয়েছিল। ব্রেসিয়ারটা পর্যন্ত গায়ে রাখতে দেয় নি। দেখেছিলাম একটা নােংরা পশু, কী রকম নির্লজ্জের মত আমাকে মাটিতে ফেলে দিয়েছিল, আর পশুর মতই আমার ওপর ঝাপিয়ে পড়েছিল। তখন আমার আর চিৎকার করবার ক্ষমতাও ছিল না। আমার ঠোট নাড়াবার উপায় ছিল না।••• 

আমি উঠতে পারছিলাম না, আমার শরীরে মনে কোন জোর ছিল না, কেবল চোখ দিয়ে জল আসছিল, আর দীনেশ নিজেই, তাড়াতাড়ি আমাকে, কোনরকমে জামা-টামা পরিয়ে দিয়ে, দরজা খুলে চলে গিয়েছিল, বলেছিল, ‘তােমাকে আমিই বাড়িতে পৌছে দেব, তৈরি হয়ে নাও।

তৈরি হতে আমার অনেক সময় লেগেছিল। ইতিমধ্যে, ঘরের দরজায়, অনেকেই উকি দিয়ে গিয়েছিল। তাদের চোখের নজর আর টেপা হাসি দেখেই বুঝেছিলাম, সব ব্যাপারটা জানাজানি হয়ে গিয়েছে।……

….আমি কথা না বলে, দরজাটা ঠেলেছিলাম, দরজাটা খােলা ছিল, ঢুকে পড়েছিলাম। দেখেছিলাম, রঞ্জা কাত হয়ে শুয়ে আছে। একটা পায়ের ওপর থেকে শাড়ি অনেকখানি উঠে গিয়েছে, বুকে আঁচল নেই, বড় করে কাটা জামা উপছে যেন ওর বুকের অনেকখানি দেখা যাচ্ছিল। ও জিজ্ঞেস করেছিল, এমন অসময়ে কী মনে করে ? ‘তােমার সঙ্গে একটু গল্প করতে এলাম। ও হেসেছিল, চিত হয়ে শুয়ে পড়েছিল। আর আমার রক্তে আগুন লেগে গিয়েছিল। আমি সােজা ওর খাটে গিয়ে বসেছিলাম। ও বলেছিল, ‘চেয়ারে বসুন।

বলেছিলাম, না থাক, তােমার কাছেই বসি।

বলেই কাত হয়ে ওর হাত ধরেছিলাম, একটুও সময় না দিয়ে, চুমাে খেয়েছিলাম। তখন আমি আমাতে ছিলাম না। ও বাধা দেবার চেষ্টা করতেই, আমি পাশে শুয়ে ওকে একেবারে বুকের কাছে টেনে এনেছিলাম। ও একবার চিৎকার করে উঠেছিল, কিন্তু আমি ততক্ষণে ওকে অনেকখানি আমার শরীরের মধ্যে আটকে ফেলেছিলাম, পাগলের মত বলেছিলাম, “রঞ্জা প্লিজ, পায়ে পড়ি, আমাকে সরিয়ে দিও না।……

…..উশীনর যদি আমাকে নিয়ে যায়, তবে যাব। উশীনরের ঘাড়ের ওপর হাত রেখেছে লাল শাড়ি মেয়েটা। মেয়েটার তাে বুকও খুলে গিয়েছে। লজ্জা করছে না? কিন্তু উশীনরের চোখ আমার দিকেই।…..

……অন্ধকারে, দুটো আদিবাসী মেয়েপুরুষ একদম নাঙা, শুয়ে আছে। আমাকে দেখেই, মরদটা উঠে, মেয়েটার ঘাড়ের ওপর ফেলে দিয়ে হাসতে লাগল। আমি ভাবলাম, মেয়েটা আমাকে পিটবে। কিন্তু পিটল না। যা বাবা, কোথা থেকে কী হয়ে গেল।….

……কিন্তু রাত্রে কী বলে লােকটা হাসতে হাসতে, আমাকে ওরকম একটা যােয়ান মেয়ের ঘাড়ের ওপর ফেলে দিল। আমি তাে প্রথমে ভেবেছিলাম, একটা মারামারি খুননাখুনি হয়ে যাবে। হায় রাম, মুণ্ডা দুকরির লাজ লজ্জা। তার গায়ের কাপড়ই বা কোথায় ছিল। একে কী বলে। তবে হ্যা, একটা কথা ঠিক, মেয়েটাকে কেন যেন আমি খারাপ বলতে পারিনা। আমার মতলব আর মেয়েটার মতলব একদম আলাদা মনে হচ্ছিল। মেয়েটা মাতাল, মেয়েটা হাসকুটে।…..

Please follow and like us:

Leave a Reply