মনীষার দুই প্রেমিক – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

›› গল্পের অংশ বিশেষ  

…….একথা বলার সময়েও মনীষা আমার দিকে ঘুরে তাকায়। নির্নিমেষে আমি দেখি। সুকুমার ভুরুর নীচে দুটি দ্বিধাহীন চোখ, এই যে নাক-ইটালির শিল্পীরা এক সময় এই রকম নাক সৃষ্টি করেছে, উড়ন্ত পাখির ছড়ানাে ডানার মতাে ঠোঁটের ভঙ্গি, একটু দুষ্টু দুষ্টু হাসি মাখানাে। একথা ঠিক, ওর ভেজা শাড়ি-ব্লাউজের রং ভেদ করে জেগে ওঠা রুপাের জামবাটির মতন স্তন আমার চোখে পড়লেও, সেখানে হাত দিতে ইচ্ছে করেনি, ইচ্ছে করেনি কুয়াশার আধাে-ভেজা চাঁদ ছুঁতে। এক এক সময় হয় এ রকম, তখন সৌন্দর্যকে নষ্ট করতে ইচ্ছে হয় না। আমি বুঝতে পেরেছিলাম, মনীষার সেই সিক্ত সৌন্দর্যের পাশে আমার লােমে ভরা শক্ত হাতটা সেই মুহূর্তে মানাবে না।………..

………মনীষা একদিন আয়নার সামনে দাঁতে ফিতে কামড়ে চুল বাঁধছিল, আমি ওর পিছনে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম—সেই দৃশ্যটা আমার বুকে বিঁধে আছে। সেই দৃশ্যটা আমি ভুলতে পারি না। মনীষা আমার দিকে পিছন ফিরে দাঁড়িয়ে—কিন্তু আয়নার মধ্যে আমরা দুজনকে দেখছিলাম—আমরা দুজনে একই দিকে তাকিয়ে—অথচ দুজনকে আমরা পরস্পর দেখতে পাচ্ছি—মনীষার আঁচলটা বুক থেকে খসে পড়ব পড়ব—অথচ খসেনি, কী এক অসম্ভব কায়দায় সে দুটি মাত্র হাতে চুল, চুলের ফিতে, চিরুনি এবং আঁচল সামলাচ্ছে— চোখে দুষ্টু দুষ্টু হাসি। মনীষা কখনও অপ্রতিভ হয় না—পিছনে আমাকে দেখতে পেয়ে বলল, কি মেয়েদের প্রসাধনের রহস্য দেখার খুব ইচ্ছে বুঝি? ঠিক আছে, দাঁড়িয়ে থাকুন, দেখবেন—আমি এগারাে রকমের স্নাে-পাউডার মাখব।……..

Please follow and like us:

Leave a Reply