যখন সবাই ছিল গর্ভবতী – সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়

›› উপন্যাসের অংশ বিশেষ  

………..মার্গারেট মিড ও পাপুয়া নিউগিনি

যাই হােক, এ সব তাে তখনকার কথা যখন আর ছােট নেই। যখন মাস্টারবেট করি ও অনুতাপে মরি। মাস্টারবেশনের জন্য নয়। অনুতাপ এই কারণে যে, যে সব বিমূর্ত নারীকে নমসহচরী হতে ডাকি, তারা সম্মত হয়, এবং রীতিমত অংশগ্রহণও করে যায় ব্যাপারটায়, তাদের কথা ভেবে। ওই বয়সে কোথায় কিশােরীদের ডাকব, তা না, তিরিশােত্তীর্ণা ছাড়া কেউ আমন্ত্রিতই হতেন না। আমি যদি আমার গার্জেন হতাম, তাহলে ১৬ বছর বয়সে একটি উত্তর-তিরিশ রমণীর সঙ্গে আমার বিয়ে দিয়ে দিতাম। তাহলে ঢের মনমতন বাঁচা যেত। ভাল বিবাহ সম্বন্ধ না হােক, আমার পক্ষে, অন্তত সেই বয়সে, সেটাই যে সবচেয়ে ভাল যৌনসম্বন্ধ হত, তাতে সন্দেহ নেই। আরও বড়বেলায় মার্গারেট মিড পড়তে গিয়ে দেখেছি, নৃতত্ত্ব বিজ্ঞানী যখন পাপুয়া নিউগিনির অভ্যন্তরে যান, ওখানে শামবুলি নামে একটি উপজাতির সংস্পর্শে আসেন যেখানে প্রতি নরনারীর দুটি বিয়ে। প্রাপ্তেযু অষ্টাদশ বর্ষে, পুরুষের প্রথম বিবাহ হয় তিরিশাের্ধ রমণীর সঙ্গে, সে তিরিশে পৌঁছলে পুনর্বিবাহিত হবে অষ্টাদশীর সঙ্গে। এরাই পৃথিবীর সেরা শরীরসম্মত জেনারেশন সৃষ্টি করছে এই ছিল শ্রীমতী মিডের উপসংহার।

হচ্ছিল ছােটবেলার কথা। কিন্তু বয়ঃপ্রাপ্তি-প্রসঙ্গ যখন এসেই পড়ল তখন মিথ্যা বলতে পারি না বলেই সত্যি বলছি আমি কিন্তু প্রথম হস্তরতি করি সুবােধ বসু নামে এক বুদ্বুদজীবী লেখকের একটি নমস্কারে’নামে এক তুলসীপত্রসম অযৌন উপন্যাস পড়ে। তার আগে আরব্য উপন্যাস পড়েছি (সচিত্র)— পাঁজিতে পাতা-জোড়া বিজ্ঞাপন পড়েছি অদ্ভুত | বশীকরণ মন্ত্রশিক্ষার (ইচ্ছামত যে কোনও রমণীকে বশীভূত করিয়া আপন কর্মসাধন করুন— পড়ুন-দেখুন– বশীভূত নারী প্রেমােন্মাদিনী হইয়া কিনা করিতে পারে) উত্তেজনা সৃষ্টির পক্ষে তাে এ সব ছিল যথেষ্ট প্ররােচনা। কিন্তু তা নয়।………..

…….ক্লাস এইটে পড়তে সদ্যবিবাহিতা বৌদি গীতারানীর ট্রাঙ্ক খুলে একদিন বিবাহের জোড় দিয়ে মােড়া একটি বই অবােধভাবে তুলে নিয়েছিলাম। অনূদিত বাংলা বইটির নাম : বিবাহিত জীবন। লেখিকা মারি স্টোপস। ঝপ করে বইটি খুলেই শেষাশেষি মাঝ বরাবর ব্লু পেন্সিলের দাগ-দেওয়া যে কটি লাইন অবিলম্বে পড়ে ফেলেছিলাম, তার মর্মার্থ হল । সঙ্গমের পরে পুরুষের উচিত পুরুষাঙ্গ নারীশরীরের মধ্যে রেখে এবং নারীর উচিত পুরুষাঙ্গ তার শরীরের অভ্যন্তরে নিয়ে আলিঙ্গনাবদ্ধ অবস্থায় ঘুমিয়ে পড়া। এতে করে, শ্ৰীমতী স্টোপস দেখেছেন, গভীরতর রাতে তাদের একসঙ্গে নিঃশ্বাস নিতে ও প্রশ্বাস ফেলতে দেখা যায়। বইটি পরে আর না দেখলেও আমার বাকি জীবনের অববাহিকা স্থির করে দেওয়ার | জন্য ওই আকস্মিক পঙক্তিক’টিই ছিল যথেষ্ট।……..

……..যুদ্ধের দৌলতে সারা পৃথিবী হুমড়ি খেয়ে পড়েছে কলকাতায়। পথে-ঘাটে আমেরিকান সৈন্য। বেশিরভাগ নিগ্রো। তখন সােসাইটি সিনেমা উঠছে। তার সবদিক খােলা কাঠামাের মধ্যে দেখেছি বীভৎস দৃশ্য। ভিখারিনী যুবতীকে তুলে দু’হাতে ধরে রেখে দাঁড়িয়ে সঙ্গম করছে এক লালচে দৈত্য। গায়ে জলপাইরঙা পােশাক। মিলিটারি ট্রাক দাঁড়িয়ে কর্পোরেশন প্লেসে।………..

Please follow and like us:

Leave a Reply