ক্রীতদাসের হাসি – শওকত ওসমান

›› উপন্যাসের অংশ বিশেষ  

……বেগম : যা। এই সুমসান রাত। এখন জওয়ানের বুকের মধ্যে বাঁধা পড়তে কি যে সুখ—……

……..–তুই নিজেই আজ আঙুর। এর চেয়ে আর বড় মেওয়া তাতারীর কাছে কিছুই হতে পারে না। (বুকে টোকা দিয়া) এখানেও ত বোটায় ভাল ফল ধরেছে।……..

…….যুবক : (ফিস্‌ফিস্ কন্ঠে) তোমার বুকের মেওয়া কি কম মধুময়, মেহেরজান।

তরুণী : তুমি যে কতদিনের দুর্ভিক্ষে উপবাসী। খালি খাওয়া ছাড়া আর কোন কথাই নেই মুখে।

যুবক : উপবাসী, অনাহারী। নিশ্চয়ই তোমার মত ইফতারীর জন্য আমি সারা জন্ম উপবাসী থাকতে রাজী। কিন্তু আর কথা বলব না।

তরুণী : তুমি আমার সদরিয়া, কাঁচুলী খুলছ কেন? তোমার দুই হাত আমি ভেঙে দেব। খাওয়া ছেড়ে এবার চাওয়া ধরেছ।

যুবক : মেহেরজান, তুমি সত্যি, সত্যি মেহেরজান। প্রাণে করুণা ঢেলে দিতে পারো।

তরুণী : আমার খোলা সীনায় তোমার ঠোঁট তাতারী। আগে আমার ঠোঁটে ছিল তোমার ঠোঁট। তোমার অধঃপতন ঘটছে, ক্রমশঃ নীচের দিকে নামছে। কোথায় গিয়ে যে থাম্‌বে–যাও।

কৃত্রিম ক্রোধ ও হাসির যুগল-ডানায় সওয়ার মেহেরজান। বাহুপাশ ছাড়িয়ে, দিওয়ানের পাশে দাঁড়ায়। সমস্ত শরীর নগ্ন। পরনে শুধু ঘাগরা…….

 

…..ইরানী মেয়ের সীনা ভাল, 

মিশরী মেয়ের ঊরু। 

আরবী মেয়ের নাভীর নীচে 

স্বর্গ ঠারে ভুরু।……

……নওয়াস : : কথায় বাধা দিও না। প্রেমে আর খাদে বেশি তফাৎ নেই, পড়ে গেলাম। সব কথা তোমার শুনে দরকার নেই। যা অনেক ঘোরাফেরা কান্নাকাটি আরজী মিনতি অগয়রহের পর আমার মহবুবা (দয়িত) ওলিদা-কে পেলাম। শোনো, ওর সদরিয়া (জামা বিশেষ) খুলে আমি ত বেহুঁশ হওয়ার উপক্রম। এমন সুগঠিত তীক্ষ্ণ বোটা স্তন আমি, খোদার কসম আর জীবনে দেখি নি। ছেলেরা কেতাব পড়ে তিনকা দিয়ে অক্ষরের কাতার ঠিক রাখার জন্যে। এ ঠিক সেই তিনকার মত। ভাবলাম, এটা হাতে থাকলে আমি আর জীবনে কাতারভ্রষ্ট হব না অর্থাৎ গোনার পথে অসৎ পথে পড়ব না। আল্লার মেহেরবানী, এমন তিনকা জুটিয়ে দিয়েছেন, জীবনের কেতাব পড়তে আমার আর ভুল হবে না। আরো শোনো। সেই অবস্থায় আমি কোথায় তিনকা হাতে গ্রহণ করব, তা না, আমার মাথা ঝুঁকে গেল। আমি সীনার ঠিক নীচে নরম ত্বকের উপর ঠোঁট রাখলাম। লোকে পা চুমে, কদম-বুসী করে, আমি করে বসলাম স্তন-বুসী, সীনা-বুসী,–যা বলো।……

…..তাতারী : মানবীর যৌবনই কি যথেষ্ট? তাহলে জননী-রূপে সে কিরূপে মর্যাদা পায়? ও কি! তোমার সদৃরিয়া খুলে ফেলছ কেন? জানো, জননীর খোলা স্তন বহুদিন আমি পান করেছি। বুঝলাম, তোমার তূণে আদিম কয়েকটা শর আছে মাত্র।

বুসায়না : জনাব, এগিয়ে আসুন। নতজানু এক নারী আপনাকে আহ্বান দিচ্ছে। আমার এই যৌবন–কে আপনি বেইজ্জাৎ করবেন না।

তাতারী : বুসায়না, তুমি ত মোড়-জানু। অঙ্গসন্ধিক্ষণে আনন্দ-আহরণ আমার কাছে অজ্ঞাত কিছু নয়–জন্তুদের কাছেও না। আমি মানুষ। আমার মন প্রয়োজন হয়!

বুসায়না : সে-মন এখন প্রয়োজন নয় কেন?

তাতারী : বুসায়না, সময়-ও মানুষের সৃষ্টি। মানুষ আছে বলেই সময় আছে। সময়েরও প্রয়োজন হয়।

বুসায়না : সে-সময় এখন নয়?

তাতারী : না। তোমার খোলা বুক ওড়নায় ঢাকো। নারীর বিবসনা হওয়ার প্রয়োজন আছে। কিন্তু সে কেবল প্রেমে। নারীর নির্লজ্জ হওয়ার অধিকার আছে। তা-ও শুধু প্রেমে। একটি মানুষ যার সান্নিধ্যে তার অস্তিত্ব অর্থবান হয়–তেমন মানুষের জন্যে। …….

Please follow and like us:

Leave a Reply