ড. রণবীর পােদ্দারের আমেরিকা আবিষ্কার – সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়

›› সম্পুর্ণ গল্প  

৫২-য় শুরু হলেও মাধবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্যের অধ্যাপক ড. রণবীর পােদ্দারের ১২ বছর ধরে হস্তরতি-নির্ভর বিপত্নীক যৌনজীবনের নতুন করে শুরু হয়েছিল যাকে বলে—উইথ এ ব্যাং! ৫২ বছর বয়সে ফিফথ ইয়ারের ছাত্রী দ্বীপশিখা পাইন তার জীবনে উঠে এল, তুলনামূলকভাবে বললে বলতে হয়, ভূমধ্যসাগরের ভেতর থেকে যেমন ভেনাস, ঝরে-পড়া জলকণা ছাড়া যার গায়ে সুতােটি নেই। অবশ্য বিখ্যাত গার্ডলটিও যদি ভেনাস থেকে খুলে নিতে চান, তাহলে আলাদা।

আমাদের আলােচ্য গল্পের নায়িকার বয়স ২২ আর তার ৫২—দুটি ক্ষেত্রেই অন্তত শুক্রের অবস্থানের দিক থেকে একটা অর্থাৎ বয়সের গরমিলে যে মিল সেদিক থেকে তুলনামূলক রয়েছে বৈকি। এবং রবীন্দ্রনাথ। সেও কিন্তু সেই তিরিশের ফের। যদিও এক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথ ৬২ এবং ভিক্টোরিয়া ৩২। রবীন্দ্রনাথ-ওকাম্পাের দেহতত্ত্বের ব্যাপারটা চিরতরে সাব্যস্ত করতে তিনি গিয়েছিলেন আর্জেন্টিনায়—সে-বছর ১৯২২-এ তপতী | গােস্বামী ওপেন হাইমারকে ডিঙ্গি মেরে তিনি যেবার মেরিল্যান্ডের ওপেন ইউনিভার্সিটি

অফ ডায়িং কালচার থেকে গ্রান্টটা পেলেন। সান ইসিদ্রো-ফিসিদ্রোর বাগানবাড়ি পর্যন্ত ধাওয়া করলেন। স্প্যানিশ দোভাষীর সাহায্যে পড়লেন ভিক্টোরিয়ার ডায়েরি। রবীন্দ্রনাথ চেয়ারে বসে আছেন, পিছনে ভিক্টোরিয়া—হয়তাে চুল আঁচড়ে দিচ্ছেন অসুস্থ কবির—যখন অন্তত একবার স্তনস্পর্শ পেলেন কবি। হাতে দিয়ে ধরলেনও একবার। ব্যাস, ঐটুকুই। ভিক্টোরিয়ার মনে হল, যেন গাছের আপেল ধরেছেন। ছিড়লেন না। এই সেই ভিক্টোরিয়া, সান ইসিদ্রোর নির্জন বাগানবাড়িতে রবীন্দ্রনাথের ঘরের পাশের যে  শুয়ে থাকে, অভিযাত্রী অধ্যাপক যেতে যেতে আরও দেখলেন, ‘কুকুরের মতাে কবির একটি ইশারার অপেক্ষায়—যদিও শালীনতার কারণে বাঙালি অনুবাদে কুকুরের মতাে হয়ে দাঁড়ায় প্রাণী বিশেষের মতাে’! ভিক্টোরিয়া তাে রবীন্দ্রনাথের ৬২ বছর দেখেননি—গবেষণা করতে গিয়ে ড. পাইন যা পেলেন—দেখেছিলেন, এক পরমপুরুষের সুগঠিত গ্রীবা। আর রবীন্দ্রনাথের অনুভব তাে ছড়িয়ে আছে পুরবী’র ছত্রে-ছত্রে। যেমন : ‘ফিরিয়া যেও না শােনাে শােননা সূর্য অস্ত যায়নি এখনও সময় রয়েছে নাকি সময়েরে দিতে ফাঁকি ভাবনা রেখাে না মনে কোনও।’ ইত্যাদি ভিক্টোরিয়া প্রস্তুত ছিলেন দেহে এবং মনে। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ? পারলেন না। কারণ শান্তিনিকেতনে মনীষী ক্ষিতিমােহন থেকে চাকর বনমালী, তিনি সকলেরই গুরুদেব। সত্যি, খ্যাতির বিড়ম্বনা আর কাকে বলে। স্বখাত সলিল’ও বলা হয়ে থাকে একে।

তখনও গবেষণা-গ্রন্থের একচ্ছত্রও লেখা হয়নি (এখনও হয়নি)। কিন্তু এইসবই—এই রবীন্দ্রনাথ নিয়ে তার গবেষণামূলক আবিষ্কারের গল্প দিয়েই, বিমুগ্ধ ছাত্রী দ্বীপশিখার কুমারী দেহতত্ত্বের উপকূলে তার জলদস্যু-অবতরণ।

‘কিন্তু ওঁর তখন ৬২’ রবীন্দ্রনাথের হয়ে সওয়াল করতে গিয়ে দ্বীপশিখা বলে। ‘তাহলে পিকাসাে?’ নাকের ডগা থেকে প্রফেসর পােদ্দারের চশমা বুকে পড়ে যায়। ভাগ্যিস কর্ণে বাঁধা ছিল, ফ্রাসােয়া জিলােকে বিয়ে করলেন কবে? যখন ৭২। সন্তানাদিও হয় এবং পরে ডিভাের্স হলেও তারা পিকাসাের বলেই প্রকাশ এবং তারা তার সম্পত্তির উত্তরাধিকারীও হয়নি কি?

‘জিলাে এসেছিল মডেল হতে। অধ্যাপক জানালেন তার জ্ঞানতাপসী ছাত্রীকে। তথ্যে সমৃদ্ধ করছেন, কাজেই খুলে বলতে তারও অসুবিধার কিছু থাকতে পারে না, যখন বললেন, পিকাসাে মাঝে মাঝে গিয়ে বুক টিপে অসেন ফ্রাঁসােয়া জিলাের। দোষের মধ্যে জিলাে জানতে চায়, মসিয়া, আপনি তাে আমার নিউড আঁকছেন না, আঁকছেন জামাকাপড়-পরা ছবি—তাহলে এ-সবের দরকার পড়ছে কেন?

তুমি কি ভাবছ, অয়েল ক্যানভাসের বুকে রঙ বােলাতে বােলাতে তুলির বাঁট দিয়ে ছবির স্তনশিখর চেপে ধরে পিকাসাে জানতে চাইলেন, এখানে কোনও মাংস নেই? শুধু রঙ আর রেখা? এখানে কতটা মাংস লাগবে, আমি সেটাই দেখে নিচ্ছি তােমার বুকে হাত রেখে।

‘আচ্চা এ-সব কি সত্যি?

‘তুমি জিলাের মাই লাইফ উইথ পিকাসাে’ বইটা পড়ে দেখাে না। সঙ্গে জন বার্জারের লেখা পিকাসাে-অ্যাসেসমেন্টটা। ঐ তাে সেল্ফ-এ রয়েছে দ্বীপশিখা হাত পাচ্ছে না দেখে ড. পােদ্দার এই সময় উঠে গিয়ে ছাত্রীর বাহুসন্ধির নিচে দু-হাত রেখে দ্বীপশিখাকে তুলে ধরেন বই-এর নাগাল যাতে সে পায় সেজন্যই—এবং দ্বীপার স্বাস্থ্যদুটি কেমন তা প্রথমে জানতে পারেন, যদিও দ্বীপশিখা তার সুগঠিত বাহুদ্বয় আগেই লক্ষ্য করেছিল। তখন লং প্লেয়িং-এ বাজছিল মােসার্টের ‘ম্যারেজ অফ ফিগাররা।

এভাবেই তার প্রথম দ্বীপা-আবিষ্কার। হ্যা, আবিষ্কারের সম্মান অধ্যাপক পাদ্দারেরই প্রাপ্য। যদিও শ্রীরামপুরের প্রতিবন্ধী মস্তান ট্যাংরা ওরফে শুদ্ধশীল ধাড়া এসে তাঁর কলার চেপে ধরে একদিন তার দাবিও রেখেছিল। কিন্তু, বল্লেই হবে! মাইরি আর কী।

আমেরিগাে ভেসুচি এসে দাবি করলেই হবে যে, আমিই আবিষ্কারক। তুমি তাে বাবা, জল থেকে জেগে ওঠা বাহামা আর কিউবা এই ভূখণ্ড দুটি শুধু ছুঁয়ে দেখেছিল! সেখান থেকেই বাণিজ্যবায়ুর হর্ষে ফিরে গেলে আপন দেশে। কিন্তু, মেনল্যান্ডের নাবি জলাভূমিতে সমুদ্রমেখলা সরিয়ে প্রথম অবতরণ করেন কলম্বাসই—যখন দু-পা ফাঁক করে দূরে তটভূমির অন্ধকার জঙ্গল দাঁড়িয়ে আছে।

আমেরিকার সঙ্গে আমেরিগাে ভেসুচির নাম জড়িয়ে গেছে ঠিকই। কিন্তু ভুল করে। এবং প্রথম প্রকৃত আবিষ্কারকের ক্ষেত্রে যা হয়।

চলে নির্বিচার লুটপাট। যত বেশি সম্ভব মাল যত তাড়াতাড়ি পারাে তুলে জাহাজে | তুলে নাও। কলম্বাস তাে তাড়াহুড়াের কারণে সােনার গহনা শুদ্ধ আদিবাসী রমণীদের মুণ্ডুগুলাে কেটে আনতে বলেছিলেন। গহনা রেখে সুন্দরীদের মুণ্ডুগুলাে পরে জলে ফেলে দেওয়া হয়। কলম্বাসের বয়স তখন ৪৭ | যখন লুটপাট। বাঁচবেন আর মাত্র ৮ বছর। এদিক থেকে লুটের মাল তােলার ব্যাপারে বিশেষ তাড়া ছিলই বলা যায়।

ক্যাম্পাসের মধ্যে প্রথম যেদিন তার ফ্ল্যাটে এল দ্বীপা। মিউজিক্যাল বেল-এ যে সুরটা আবিষ্কারের মুহূর্তে বেজে উঠেছিল, ড. পাইন জানতেন।

ওটা বেটোফেনের অ্যালিস নামে বালিকার জন্য রচিত ছােট্ট সােনাটার প্রথম ছত্র। রারা/রা-রা-রা/রা-রা-রা-রা/রা-রা-রা/রা-রা-রা-রা/রা-রা-রা/রা… এইভাবে পর্বভাগ। সােনাটাটি ছােট্ট বাঁশি পিকোলােতে। কিন্তু মিউজিক্যাল বেল কয়েক মুহূর্তে ঐটুকু পৰ্বাংশ শেষ হবার আগেই ল্যাচ খুলে সেদিন চৈত্রমাস, আর দুপুরবেলা বিপত্নীকের গুহায় দ্বীপাকে ঝটিতি ঢুকিয়ে নেন ড. পােদ্দার। নরম আলিঙ্গনে মেয়ের-মতাে-কিন্তু-মেয়ে-নয় ছাত্রীকে বুকে টেনে নিয়ে, তাকে দরজা-সংলগ্ন রেখেই দ্বীপশিখার বােতামগুলি তিনি খুলতে থাকেন। বলাবাহুল্য, মেয়েদের শারীরিক অবস্থানগুলাের মধ্যে তাদের বুক দুটিই তার কাছে বরাবর অগ্রাধিকার পেয়ে এসেছে।

ঠিকই যে, দ্বীপশিখা পাইনের স্বাস্থ্যদুটি কেমন, ডা. পাইন ছাড়াও তা বিশদভাবে জানে শ্রীরামপুরের ট্যাংরা ওরফে বর্তমানে বিশিষ্ট যুবনেতা শুদ্ধশীল ধাড়াও। তারা ইতিমধ্যেই সল্টলেকে কো-অপ-ফ্ল্যাটের চারতলায় উঠে পড়েছে এবং সন্তানসন্তুতি ক্রমে আরও উচ্চাতায় যাবে সন্দেহ নেই। কিন্তু, এভাবে, আমেরিকার সঙ্গে আমেরিগাে ভেসুচির নাম বৈধতা পেয়ে গেলেও—আসলে তা খ্রিস্টোফার কলম্বাসের আবিষ্কার। কারণ, আগে এলেও জলের ব্রেসিয়ার সরিয়ে ভেপুঁচি দেখেছিলেন শুধু উন্মুক্ত দ্বীপ দুটি। আর, কলম্বাসের কৃতিত্বের কথা পূর্বেই বলা হয়েছে।

বিনােদন বিচিত্রা, শারদ সংখ্যা, ২০০২

Please follow and like us:

Leave a Reply