সোনালী কাবিন কাব্যগ্রন্থ – আল মাহমুদ

›› কবিতার / কাব্যের অংশ  

অন্তরভেদী অবলোকন

কাল মৃত্যু হাত বাড়িয়েছিলো আমার ঘরে। জানলার
ফাঁক দিয়ে সেই দীর্ঘ হাত অন্ধের অনুভব শক্তির মতো
বিছানার ওপর একটু একটু এগোল। আমার স্ত্রী শিশুটির
মাথায় পানির ধারা দিচ্ছিলেন। তার চোখ ছিল পলকহীন, পাথর।
স্তন দুটি দুধের ভারে ফলের আবেগে ঝুলে আছে!
পানির ধারা প্রপাতের শব্দের মতো হয়ে উঠে সবকিছুতে
কাঁপন ধরিয়ে দিলো। লুণ্ঠনের আলো ময়ূরের পালকের
অনুকরণে কাপতে লাগলো। অবিকল।……..

উল্টানো চোখ

……এমন কি মেয়েরা যখন কলতলায় শাড়ি পাল্টায়,
আমার চোখ নির্লজ্জের মতো দ্রুত দেখে নেয়।
সাত পাট কাপড় যেখানে কাচের মতো স্বচ্ছ
কে আর আমাকে অন্ধ করতে পারবে?……..

……পরিচিত অপরিচিত মেয়েরা এখন আমার সামনে না-আসুক
কারণ তাদের ঢাকাঢাকি বড়ো বেশি। আর
আমার চোখে এখন আবরণের অস্তিত্ব নেই।……..

প্রকৃতি

………ত্রিকোণ আকারে যেন
ফাঁক হয়ে রয়েছে মৃন্ময়ী
আর সে জ্যামিতি থেকে
ক্রমাগত উঠে এসে মাছ পাখি
পশু আর মানুষের ঝাঁক……..

……..ক্ষীরের মতন গাঢ় মাটির নরমে
কোমল ধানের চারা রুয়ে দিতে গিয়ে
ভাবলাম; এ মৃত্তিকা প্রিয়তমা কিষাণী আমার
বিলের জমির মতো জলসিক্ত সুখদ লজ্জায়
যে নারী উদাম করে সর্ব উর্বর আধার।………

সোনালী কাবিন

…….তারপর তুলতে চাও কামের প্রসঙ্গ যদি নারী
খেতের আড়ালে এসে নগ্ন করো যৌবন জরদ,
শস্যের সপক্ষে থেকে যতটুকু অনুরাগ পারি
তারো বেশি ঢেলে দেবো আন্তরিক রতির দরদ,
সলাজ সাহস নিয়ে ধরে আছি পট্টময় শাড়ি
সুকণ্ঠি কবুল করো, এ অধমই তোমার মরদ।………

……রাতের নদীতে ভাসা পানিউড়ী পাখির ছতরে ,
সৃষ্ট ঢেউয়ের পাল যে কিসিমে ভাংগে ছল ছল
আমার চুম্বন রাশী ক্রমাগত তোমার গতরে
ঢেলে দেবো চিরদিন মুক্ত করে লজ্জায় আগল……

শোণিতে সৌরভ

………..তোমার মাংসের উষ্ণ আতাফল
শোণিতে মেশালো কি মধুর সৌরভ?
প্রতিটি দিন যায় আহত, নিষ্ফল
তোমার মাংসের উষ্ণ আতাফল,–
ঈভের মতো আজ হওনা চঞ্চল
আমার ডানহাতে রাখো সে গৌরব;
তোমার মাংসের উষ্ণ আতাফল
শোণিতে মেশালো কি মধুর সৌরভ।

তোমার নাভি দেখে হাঁটছি একা আমি
দেবে কি গুল্মের কৃষ্ণ সানুদেশ?
যেখানে পাখি নেই রক্ত দ্রুতগামী
তোমার নাভি দেখে হাঁটছি একা আমি
মধ্যযুগী এক যুবক গোস্বামী
দেহেই পেতে চায় পথের নির্দেশ;
তোমার নাভিমূলে দেখেছি একা আমি
নরম গুল্মের কৃষ্ণ সানুদেশ।……….

Please follow and like us:

Leave a Reply